বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের অন্যতম খাত তৈরি পোশাক। আর এই তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর এই শিল্পে বড় ধরণের ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। তৈরী পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে জিএসপি সুবিধা উঠিয়ে প্রত্যাহার করে নেয়। সেই ধারাবাহিকতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, ডেনমার্ক, সুইডেন এবং জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানিতে এক ধরণের স্থবিরতা নেমে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ধস নামলেও ইউরোপের অন্যতম চার দেশ জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স এবং ইতালির বাজারে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি গামের্ন্টস শিল্পে নিরাপত্তা, কর্ম পরিবেশ এবং বিভিন্ন শর্তপূরণ সাপেক্ষে আবারো পোশাক রপ্তানিতে গতি ফিরে এসেছে। আন্তর্জাতিকভাবে নতুন নতুন বাজার তৈরি হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় ইউরোপের দেশ পর্তুগালে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা। পণ্যের গুণগত মান, চাহিদা আর রপ্তানি প্রক্রিয়ায় জটিলতা না থাকলে প্রতি বছর দেশটিতে কয়েক মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব।
পর্তুগালের সর্ববৃহৎ পোশাক আমদানিকারক কোম্পানি সুবিটেক্সের কর্ণধার মন্টি নিগ্রো পোর্তো চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে । গত এপ্রিলে পর্তুগালে, পোর্ত চেম্বার অব কমার্সের সাথে বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তোর নেতৃবৃন্দের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানিতে পর্তুগালের এই আকাঙ্খা রপ্তানি বাজারে নতুন দিগন্ত তৈরী করবে বলে আশা দেশের পোশাক রপ্তানিকারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর।
বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন- বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির গত এপ্রিলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ১২ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল আমাদের। কেবল জার্মানি ছাড়া আর কোথাও আশানুরূপ রপ্তানি হয়নি। অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সের কারণে রপ্তানি সীমিত হয়েছে। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণে এমন হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি চলে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ জার্মানি। আর মহাদেশ ভিত্তিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে অনেক আগেই আমেরিকা মহাদেশকে পেছনে ফেলেছে ইউরোপ।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় আট শতাংশ। অথচ একই সময়ে জার্মানিতে বেড়েছে সোয়া ১৮ শতাংশ। রপ্তানি কমেছে জাপান, কানাডাতেও। তবে বেড়েছে স্পেন, ফ্রান্স ও ইতালিতে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৪ কোটি ৮ লাখ ৫৭ হাজার ডলারের পণ্য। একই সময়ে জার্মানিতে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৭৮ কোটি ৪৪ লাখ ২২ হাজার ৪৭৭ ডলারের। সেই হিসাবে ঐ আট মাসে দুই দেশের রপ্তানির ব্যবধান প্রায় ছয় কোটি ডলার। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭.৮৫ শতাংশ।
পর্তুগাল প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মামুন হাজারী জানান, পর্তুগালে অনেক বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা রয়েছে। তবে বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা দেখা দিয়েছে। যদি সরকারের কাছ থেকে সার্বিক সুবিধা পাওয়া যায় ও রপ্তানি প্রক্রিয়ায় গতি থাকে তাহলে পর্তুগাল থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘পর্তুগালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রসার ঘটাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা’।
আর এ জন্য দুই দেশের সরকার এবং কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সহজ একটি ব্যবসায়িক পরিবেশ যেন গড়ে তোলার আহবান জানান মামুন হাজারী। পাশাপাশি পর্তুগালে বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ীদের ব্যবসাবান্ধব সকল বিষয় ও জটিলতা নিরসনে পর্তু মিউনিসিপালিটি কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
মামুন হাজারীর মতো আরো অনেক ব্যবসায়ীই মনে করেন,সঠিক পদক্ষেপ ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়া গেলে পর্তুগাল হতে পারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অন্যতম বাজার ।
No comments:
Post a Comment