মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ কুয়েতের শ্রমবাজার বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ১৯৭৮ সালে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী কুয়েতে বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ কর্মী রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, পুরুষ কর্মীদের তুলনায় নারী কর্মীদের জীবন যাপন আরও বেশি মানবেতর।
কুয়েতে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন বাংলাদেশি নাসরিন আক্তার মৌসুমী। তিনি কুয়েত বাংলা রেডিও পরিবারের একজন সক্রিয় সদস্য। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের সাথেও জড়িত। এই কুয়েত প্রবাসী নারী জানান, কুয়েতে কর্মরত নারী শ্রমিকদের অর্ধেকেরও বেশি বিভিন্ন ক্লিনিং কোম্পানিতে কাজ করে। তাদের জীবন যাত্রা অন্ত্যন্ত নিম্ন মানের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কুয়েতি নারী কর্মী বলেন, আমরা এখানে ছোট্ট একটা রুমে ডাবল ডেকার বেডে একসাথে ৬/৭ জন থাকি। ছয় সাত মাসেও কখনো মাংস খেতে পাই না। ৫ জনের বাজারে ১৫ জনের খাবার চলে। তাও আবার সবজি আর ডাল ভাত। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঠিকমতো খাবার ও সুস্থ্য বাসস্থানের অভাবে অনেক নারী শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পরে। কর্মক্ষেত্রে গিয়ে ভালো পরিশ্রম না দিতে পারায় অনেকে চাকরি হারায়।
কুয়েত প্রবাসী মৌসুমী বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব নারী কুয়েতে কাজের জন্য যায়, তারা সাধারনত সেখানে গিয়েও দালালচক্রের কাছে জিম্মি হয়ে থাকেন। আবাসন, খাবার থেকে শুরু করে আকামা পর্যন্ত সব কিছুই পরিচালিত হয় ওইসব দালালদের নির্দেশে। ফলে নিজেদের জীবন যাপনের উপর তাদের কোন কর্তৃত্ব থাকে না ।
এই প্রবাসী নারী জানান, বাংলাদেশি নারীরা কর্মীরা বেশিরভাগই অশিক্ষিত। এ কারণে তাদেরকে বাইরে গিয়েও দালাল নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। সামান্য কোন বিষয়ে কাগজ পত্র নিয়ে হাজির হতে হয় দালালের কাছে। এই সুযোগে দালালরা তাদের সর্বস্ব দখল করে বসে। এমনকি ভুয়া জায়গায় অসহায় কর্মীদের সই নিয়ে বেতন ও বোনাস তুলে নেয়ারও অনেক অভিযোগ রয়েছে নারী কর্মীদের কাছে। এই কুয়েত প্রবাসী আরও জানান, স্থানীয় কুয়েতিরা বাংলাদেশিদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেনা। বিদেশি কর্মীদের প্রতি তারা সহানভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
বরং কুয়েতে এক শ্রেণির দালাল চক্র গড়ে উঠেছে যারা দেশীয় একটি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। এই চক্রগুলো বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের অসহায় ও অশিক্ষিত নারীদের বিদেশে বেশি টাকা বেতনের চাকরির লোভ দেখিয়ে নিয়ে এসে বিপদে ফেলে। প্রতিটা স্তরে নিজেদের লোক দিয়ে এরা নারী কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করে। ওই দালাল চক্রেরই একটি অংশ নারী কর্মীদের কোম্পানিতে কাজের সুযোগ তৈরি করে দেয়। এরপর বেতন, ভাতা, বোনাস সবকিছুতেই তাদের একটা শেয়ার থাকে। এমনকি এসব টাকা সরাসরি নারী কর্মীরা পায়না। কোম্পানির কাছ থেকে দালালের হাত ঘুরে তাদের কাছে আসে। ফলে কোম্পানি না ঠকালেই শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়। লাভবান হয় মধ্যস্বত্তভোগী বিদেশে থাকা দালাল শ্রেণি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্যান্যের মত নারী কর্মীদেরও ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করে তারপর বিদেশ পাঠাতে হবে। তাহলে তারা ভিনদেশে গিয়ে আর দালালের জিম্মায় থাকবে না। অন্যদিকে, যারা সিন্ডিকেট তৈরি করে বিদেশে কর্মীদের জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
No comments:
Post a Comment