পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষ তালিকায় থাকা ইউরোপের অন্যতম দেশ স্পেন। দেশটির রাজধানী মাদ্রিদের বিখ্যাত একটি শহরের নাম লাভাপিয়াস। ইউরোপের অন্যতম দুই ফুটবল ক্লাব রিয়েল মাদ্রিদ ও এতলেটিকো মাদ্রিদ, আন্তর্জাতিক মিলনকেন্দ্র আর্টস মাদ্রিদসহ অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র নিয়ে গড়ে ওঠা এই শহরটি আন্তর্জাতিকভাবে বহুল পরিচিত।
লাভাপিয়াসে প্রায় দুই’ শ বাঙালি পরিবার রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশির বাস সেখানে। তাদের মধ্যে অনেকেই স্পেনের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। বাকিরা নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করছেন। লাভসপিয়েসের ৯০ ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য বাংলাদেশিদের দখলে। রয়েছে প্রায় দুই’ শ বাংলাদেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এসবের নামও দেয়া হয়েছে বাঙালি ঐতিহ্য বা সংস্কৃতির নামে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন: আনারকলি, বাংলা সেন্টার, বাংলা টাউন, মাতৃভূমিসহ আরো অসংখ্য বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রয়েছে বাংলাদেশিদের পরিচালনায় দুটি মসজিদ ও ইসলামী সেন্টার।
লাভাপিয়েসের বাংলাদেশিদের সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সেই শহরে এক টুকরো বাংলাদেশ গড়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনি জানিয়েছেন স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশি রিজভী আলম। রিজভী বলেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছেলে-মেয়েদের বাংলা ভাষা, দেশ ও দেশের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করে দেওয়ার জন্য কয়েকজন বাংলাদেশি মিলে গড়ে তোলা হয় মান্নান বাংলা স্কুল। আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা থাকলেও শুরুতে বাংলা বইয়ের ব্যবস্থা ছিলনা। পরবর্তীতে কয়েকজনের সার্বিক প্রচেষ্টায় সেই প্রতিবন্ধকতা দূর হয়। এই স্কুলকে ঘিরেই স্পেনে বাঙালি নতুন প্রজন্মের বাংলা ভাষা চর্চা শুরু হয়।
এরপর ২০১৬ সালের শুরুতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেন এগিয়ে আসে ওই বাংলা স্কুলের সহযোগিতায়। রিজভী বলেন, এভাবেই প্রবাসীর সন্তানদের পরিচয় করে দেওয়া হয় বাংলা বর্ণমালা, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, বাংলাদেশের জন্ম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে। এখন সেখানে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছেলেমেয়েগুলো স্প্যানিশ ভাষার পাশাপাশি বাংলা লিখতে-পড়তেও জানে। এছাড়া তারা সুর করে গাইতে জানে আমাদের জাতীয় সংগীত—আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। তারা জানে পয়লা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক, ১৬’ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস, আমাদের গর্ব ও অহংকার।
এই স্পেন প্রবাসী জানান, বাংলাদেশিদের উদ্যোগে একসময় ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠে সেখানে। এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং এখন ৯০ শতাংশ দোকান সেখানে বাংলাদেশিদের। এছাড়া আগের তুলনায় বেড়েছে বাংলাদেশিদের সংখ্যা। ফলে পোশাক, খাবার থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই রয়েছে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। এমনকি অনেক স্প্যানিশও বাঙালিদের পাশে থাকতে থাকতে বাংলা ভাষা বলতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্পেন এ জন্মগ্রহণকারী বিদেশের ভাষা আর সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা এই ছেলেমেয়েদের আর হয়তো কখনো বাংলাদেশে ফিরে আসা হবে না। কিন্তু তারাই একসময় বিদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। বিদেশীদের বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।
No comments:
Post a Comment