Social Icons

Saturday, August 26, 2017

মালয়েশিয়ায় ভুয়া কলেজের প্রতারণার ফাঁদে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা


সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বিভিন্ন উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুখরিত হচ্ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। আবার একই সাথে অনেক শিক্ষার্থী দালালদের খপ্পড়ে পড়ে হচ্ছেন প্রতারিত। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ‘দ্য স্টার’ পত্রিকা অনুসন্ধান চালিয়ে  এমন এক চক্রের সন্ধান পেয়েছে। চক্রটি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে গিয়ে মানহীন ভুয়া কলেজে ভর্তি করিয়ে দিচ্ছে।
এজেন্টের মাধ্যমে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্যে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। কিন্তু এদের অনেকেই এজেন্টদের কাছে ধোঁকার শিকার হচ্ছেন। অনেকেই সেখানে যাওয়ার পর দেখছেন লাখ লাখ টাকা খরচ করে মানহীন ও ভুয়া কলেজে তাদের ভর্তি হতে হচ্ছে। ভুয়া কলেজে ভর্তি হয়েই তাদের দুঃখ শেষ হয় না। বলতে গেলে এখান থেকেই তাদের এক কষ্টকর ও মানবেতর জীবনের সূচনা হয়। মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর ভিকটিমরা বুঝতে পারেন যে কলেজে তাদের ভর্তি করা হয়েছে সেখানে পড়াশোনার কোনো বালাই নেই। অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে যাওয়ার পর সহসা ফিরে আসারও উপায় থাকে না। ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রায়ই তাদের কাছ থেকে বাড়তি ফি আদায় করে কলেজগুলো। স্টুডেন্ট ভিসা হওয়ায় বৈধভাবে রোজগারেরও কোনো সুযোগ থাকে না। ফিরতি প্লেনের টিকিটের টাকা জোগাড় বা ঋণ শোধের জন্য এদের অনেকেই বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হন। সামান্য আয়ের জন্য ভিসার মেয়াদ বাড়াতে তাদেরকে ফের দালালদের কাছেই ফিরে যেতে হয়।
প্রতারণার শিকার এমন একজন শিক্ষার্থী জানান, ‘দালালদের পেছনেই জমানো সব টাকা খরচ করে ফেলেছে আমার পরিবার। এই অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারছি না। ‘ তিনি জানান, তার বাবা ইতিমধ্যে দুবার স্ট্রোক করেছেন। এখন চিকিৎসার খরচ চালানোর জন্য তাকে মালয়েশিয়ায় কাজ করতে হচ্ছে।
‘দ্য স্টার’ পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদকদের একটি দল গোপনে তদন্ত চালিয়ে ছাত্র পাচারকারী বেশ কয়েকটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে।  প্রতিবেদক দলটি নিজেদের ফ্যাক্টরির ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে এরকম এক দালালের সাথে দেখা করে। দলটি জানায় যে তারা সস্তা শ্রমিক খুঁজতে কলেজে এসেছে। তাদের তদন্তে দেখা যায় পাচারকারী এই চক্রটি মালয়েশিয়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত।
সাংবাদিকদেরকে এক দালাল বলেন তিনি এমন একজনের জন্য কাজ করেন যার কুয়ালালামপুরে একটি কলেজ রয়েছে। তিনি একাই বাংলাদেশ থেকে আট হাজার ছাত্র পাচার করে নিয়ে আসার কথা স্বীকার করেন। নেপালি এই নাগরিক বলেন, “বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে সহজ শিকার। এদের কাছ থেকে টাকাও বেশি পাওয়া যায়।” তিনি বলেন, “২০০ থেকে ৩০০ জনকে নিয়ে এসে কলেজে ভাগ করে দাও তারপর শুধু টাকা কামাও।”
মালয়েশিয়ায় এরকম ভুয়া কলেজে বিদেশি ছাত্র ভর্তি নিয়ে ২০১৩ সালেও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ‘দ্য স্টার’। এর প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঁচটি কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর আরও ২৬টি কলেজের লাইসেন্স বাতিল অথবা নবায়ন হয়নি।
এই কলেজগুলো বিদেশি ছাত্র ভর্তি করতে না পারলেও এরা ছাত্র এনে অন্য কলেজে ভর্তি করানোর মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ওই দালাল বলেন, “গ্রুপ অব কোম্পানির মত তারা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।”
পাচার হয়ে আসা শিক্ষার্থীরা গোপনে যেসব জায়গায় কাজ করেন তার থেকে অল্প দূরেই ক্লাং ভ্যালির বড় শহরগুলোর অবস্থান। সেখানকার শহরগুলো আলো ঝলমলে হলেও বছরের পর বছর ধরে অন্ধকারেই কেটে যায় ভাগ্য বিড়ম্বিত এই ছাত্রদের জীবন। একটি কলেজ তিন হাজার বাংলাদেশি ছাত্র ভর্তি হওয়ার কথা জানালেও সেই কলেজের ক্যাম্পাস প্রায় জনমানবহীন বলেই মনে হয়েছে। একজন ছাত্র বলেন, “পড়ালেখা করতে আমি এখানে এসেছিলাম। শুধুমাত্র পড়ালেখা করতে। কিন্তু এখন আমার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।”

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates