ইউরোপের দেশ জার্মানিতে বাস করে ৪০ লাখেরও বেশি মুসলিম। তারা কি এই দেশটিকে বদলে দিচ্ছে? যদি দেয়, তাহলে কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজর চেষ্টা করেছে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে। এ নিয়ে তারা অনুসন্ধান চালিয়েছে জার্মানির সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র কোলন শহর এবং এর আশপাশের এলাকায়।
২০১৫ সালে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার পর জার্মানিজুড়ে আলোচনার অন্যতম বিষয়ে পরিণত হয় ইসলাম। বিশেষ করে দেশটির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়ার শহর কোলন ও তার আশপাশের এলাকায়। জার্মানিতে থাকা প্রায় ৪০ লাখ মুসলিমের ১৪ লাখের বাস এই রাজ্যে।
আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জার্মানির সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দেশটির ছয়টি বড় শহরে নানা প্রশ্ন নিয়ে সাধারণ মানুষের মুখোমুখি হন ডয়চে ভেলের দুই প্রতিবেদক নিনা হাসে এবং সুমি সমাস্কান্দা। তাদের মতে, এবারের নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনার সময় সবচেয়ে কঠিন ছিল ইসলাম নিয়ে কথা বলা। ইসলাম জার্মানিকে ধারণ করে কি না- এই প্রশ্ন উঠলেই ছড়িয়েছে উত্তাপ, জমে ওঠেছে আলোচনা।
অনেকে এটাকে ‘শান্তি ও সহিষ্ণুতার’ ধর্ম হিসেবে দেখেন। অনেকে আবার এটাকে মনে করেন, ‘ঘৃণার বাহক’ বলে। কারো কারো কাছে রাস্তায় চলা নারীদের স্কার্ফ পরা ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অংশ। আবার কারো মতে, এটা ‘নিপীড়নের প্রতীক’।
জার্মানির মুসলিমরা ইসলামের বিভিন্ন ধারার প্রতিনিধিত্ব করে। এই রাজ্যেও একই অবস্থা। কোলন শহরে গত মাসে নতুন একটি কেন্দ্রীয় মসজিদ উদ্বোধন হয়। অটোমান তুর্কিদের ধাঁচে নির্মিত এই মসজিদ গ্লাস ও পাথরে চকচক করে। ৫৫ মিটার উঁচু মিনার জানান দিচ্ছে মসজিদের অস্তিত্ব। তারকাখচিত মসজিদের ভেতরে একত্রে হাজারেরও বেশি মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদটি নিয়ে অনেক বিতর্কও হয়েছে। কোলনের প্রধান গির্জার গম্বুজটি শতাব্দীর পর শতাব্দী আকাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সেই আকাশে ভাগ বসাবে মিনার- এটা যেন মানতে পারছিলেন না অনেক খ্রিস্টান নেতা। তাই এ স্থাপনা নিয়ে নগরের প্রধান স্থপতির দপ্তরকে রাজি করাতে টার্কিশ-ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ারকে (ডিআইটিআইবি) বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
জার্মানিতে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ডিআইটিআইবি। এটি তুরস্ক সরকারের ধর্মবিষয়ক কর্তৃপক্ষের অংশ। একে ঘিরে সম্প্রতি তুরস্ক-জার্মানি সম্পর্ক অবনতি হয়েছে। ডিআইটিআইবি’র বিরুদ্ধে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের স্বার্থে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। আন্তঃধর্মীয় জীবন এখানে কতটা জটিল- এটা যেন সেটারই একটা চিত্র।
জার্মানির শহর বনের পাশেই বাড গোডেসবার্গ আল-আনসার মসজিদের ইমাম আবদেলকাদের ইজেইম বলেন, যেসব ‘রক্ষণশীল’ মুসলিম তাদের পছন্দসই বিশ্বাসকে আঁকড়ে বাঁচতে চায়, এই ধারা খুব গভীরভাবে তাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘নানা কারণে অনেক নেতিবাচক চিত্র তৈরি হয়েছে। অনেক মুসলিম আছে, যারা আমাদের সম্মিলিত ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে মুসলিম এবং ইসলাম এমনই। আমরা এসব উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা করছি। জার্মানদের দেখাতে চাই, এটা বাস্তবতা নয়। ভালো ভালো কাজ করাই ইসলামের মূল শিক্ষা। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ইসলাম ও মুসলিমদেরকে ভয় করা উচিত নয়। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম। সংলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
কোলনে লিবারেল ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে এর সংগঠক আনিকা মেহমেতি বলেন, এখানে ৪০ লাখ মুসলিম বাস করেন। তারা সবাই বিভিন্নভাবে তাদের ধর্ম এবং সংস্কৃতি পালন করেন। তাদের জীবনও আলাদা। আরও বড় পরিসরে চিন্তা করলে একটা খোলামেলা এবং আন্তরিক সংলাপ সম্ভব।
No comments:
Post a Comment