উন্নত জীবন, সামাজিক নিরাপত্তা আর আবাসন সুবিধায় সারা বিশ্বের অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয়তা বরাবরই কেন্দ্রবিন্দুতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা শিক্ষা, ব্যবসা, অভিবাসনের জন্য বেছে নিচ্ছেন ওশেনিয়া মহাদেশের এই দেশটিকে। তবে সম্প্রতি সে সুযোগ একটু বেশি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশিদের জন্য। ডাক্তারি পেশায় দেশটিতে বাংলাদেশিদের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। চিকিৎসক হিসেবে অস্ট্রেলিয়াতে অভিবাসনের পাশাপাশি রয়েছে বেশ কিছু সুযোগে-সুবিধা।
কিন্তু সমস্যা হলো শত ব্যস্ততার মাঝে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা ডাক্তারদের জন্য বেশ ঝামেলার। বেশিরভাগ সময়ই বাংলাদেশের অনেক ডাক্তার জানতে চান কিভাবে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন শুরু করবেন আর কিভাবেই বা একজন নিবন্ধিত ডাক্তার হিসেবে অস্ট্রেলিয়াতে ক্যারিয়ার শুরু করবেন।
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা: ফেরদৌস জানান, কিছু নিয়ম-কানুন এবং শর্ত পূরণ করতে পারলে অস্ট্রেলিয়াতে ডাক্তার হিসেবে কাজ করার বেশ সুযোগ রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো, সঠিক এবং নির্দিষ্ট সময়ে খবর বা যোগাযোগ করতে না পারায় অন্য দেশ গুলো এ সুযোগটি নিয়ে নেয়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশি ডাক্তারদের সাফল্য বেশ নজরে এসেছে অস্ট্রেলিয়া সরকারের।
বাংলাদেশ থেকে ডাক্তারি পড়া অবস্থায় কিংবা পড়াশুনা শেষ করে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল কিংবা মেডিকেল সেন্টারগুলোতে চিকিৎসক হিসেবে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে দেশটির সরকার। আর এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে স্কলারশিপ ছাড়ে প্রতিবছর। নিদিষ্ট সময় এবং যথাযথ পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে পারলেই আপনিও পেতে পারেন এই সুবর্ণ সুযোগ।
কিভাবে এবং কোন পদ্ধতি অনুসরণ করলে অস্ট্রেলিয়াতে ডাক্তারি পেশায় অভিবাসন পাওয়া সম্ভব সে বিষয়ে ডা. ফেরদৌস জানান, সব বিদেশি ডাক্তারকে সেখানে কাজ শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল বোর্ড থেকে রেজিস্ট্রেশন নেয়া আবশ্যক। এই রেজিস্ট্রেশন পেতে হলে যা যা করতে হবে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী এখানে তুলে ধরা হলো। প্রথমেই আপনাকে দেখে নিতে হবে যে, আপনার মেডিকেল কলেজটি IMED FAIMER (FAIMER International Medical Education Directory) লিস্টে আছে কিনা। (https://imed.faimer.org.)
এরপর আপনাকে আপনার ডিগ্রি ভেরিফিকেশন কোর্ড এর জন্য আবেদন করতে হবে এবং অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল কাউন্সিল-এএমসি’তে অনলাইনে একটি আবেদন করতে হবে আপনার AMC portfolio করার জন্য। AMC-র অফিশিয়াল ওয়েবসাইট হচ্ছে- www.amc.org.au. এএমসি এবার আপনার আবেদন টি পর্যবেক্ষণ করবে এবং আপনাকে আপনার এএমসি ক্যান্ডিডেট নম্বর জানিয়ে একটি ইমেইল পাঠাবে। ডিগ্রি ভেরিফিকেশন একটু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, কিন্তু এরমধ্যে এএমসি ক্যান্ডিডেট নম্বরটি পেয়ে গেলে আপনি এএমসি’র প্রথম পত্র পরীক্ষা (Part-1 MCQ)- তে বসতে পারেন এবং সুবিধামত সময়ে পরীক্ষার দিন নির্ধারণ করতে পারেন। এই পরীক্ষাটি একটি কম্পিউটার নির্ভর MCQ পরীক্ষা এবং অস্ট্রেলিয়ার বাইরেও বিভিন্ন দেশে এই পরীক্ষাটি দেয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের নিকটবর্তী ভারতের মুম্বাই, চেন্নাই, দিল্লি এবং হায়দারাবাদে এই পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া অনেক বাংলাদেশি সিঙ্গাপুর অথবা থাইল্যান্ডের ব্যাংককেও এই পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। এরমধ্যে আপনার ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া হয়ে গেলে দ্বিতীয় ধাপটির জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করতে পারেন। এএমসি’র এই দ্বিতীয় পরীক্ষাটি Part-2 Clinical পরীক্ষা নামে পরিচিত, যা শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়াতেই হয়ে থাকে। কোনো বিদেশি ডাক্তার এই দুটি পরীক্ষা পাশ করলে, এএমসি তাকে একটি সনদপত্র (AMC Certificate) প্রদান করবে।
এর পরবর্তী ধাপ হচ্ছে, ইংরেজি দক্ষতার (English Language Test) পরীক্ষা। কারণ অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনের জন্য মনোনীত হতে এএমসি সার্টিফিকেট এবং ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্ট আবশ্যক। এক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ড বিভিন্ন ধরনের ইংলিশ টেস্ট গ্রহণ করে থাকে, যার মধ্যে OET (Occupational English Test), IELTS (Academic), PTE (Pearson Test of English Academic), TOEFL, IBT অন্যতম। ইংরেজী দক্ষতার পরীক্ষায় আপনাকে অবশ্যই প্রতিটি সেকশনে IELTS (Academic) স্কোর ৭.০ এর উপর অথবা সমমানের স্কোর থাকতে হবে। এই তিনটি ধাপ সাফল্যের সাথে শেষ করলে একজন বিদেশি ডাক্তার অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল বোর্ড থেকে রেজিস্ট্রেশন নিতে পারেন আর পছন্দ মত চাকরি খোঁজা শুরু করতে পারেন।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সব শর্ত পূরণ করতে পারলে আপনিও অস্ট্রেলিয়ায় একজন পেশাদার ডাক্তার হিসেবে জীবন গড়তে পারেন।
No comments:
Post a Comment