দক্ষিণ ইউরোপের ছোট্ট একটি দেশ মাল্টা। দেশটিতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা সেখানে জন্মগ্রহণ করেনি এবং আগে থেকে তাদের কোন আত্মীয় বা পরিবারের সদস্যও নেই। কিন্তু তারা শরনার্থী হিসেবেও অবস্থান করছে না, এমনকি অভিবাসীও নয়। তারা মাল্টার নাগরিক এবং তাদের হাতে সে দেশের পাসপোর্ট আছে। প্রশ্ন হলো – তাদের হাতে মাল্টার পাসপোর্ট আসলো কিভাবে? যার উত্তর হলো তারা এখানে পাসপোর্ট কিনেছে। ২০১৪ সাল থেকে দেশটিতে পাসপোর্ট বিক্রি শুরু হয়েছে।
যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে রেসিডেন্সি ভিসা বা ইনভেষ্টর ভিসা দিয়ে থাকে। মাল্টা সেখানে দেয় পূর্ণ নাগরিকত্ব। আর এর জন্য খরচ হয় আট লাখ আশি হাজার ইউরো। সেইসাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য দিতে হয় আরো কিছু অর্থ। এর তিন চতুর্থাংশ হলো মাল্টার জাতীয় উন্নয়ন ও সামাজিক তহবিলের জন্য অফেরতযোগ্য অংশ, যা থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং চাকরি সৃষ্টির প্রকল্পগুলিতে অর্থায়ন করা হয়। বাকি এক অংশ সরকারি বন্ডের আওতায় বিনিয়োগ হয় এবং কমপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিকে একটি বাড়ির মালিকানা দেয়া হয় যেটাতে সে থাকতে পারে বা ভাড়া দিতে পারে।
ইতালির খুব কাছের দেশ হওয়ায় এখানে অল্প সংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছে। ইতালি প্রবাসী ব্যবসায়ী মোঃ জাহিদুল বলেন, মাল্টা ইতালির অনকে কাছের একটি দেশ। এ দেশে নতুন ভাবে কাজের তেমন জায়গা নেই। তবে মাল্টা তুলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী একটি দেশ।তাই তুলা চাষের জন্য অনেক বাংলাদেশিদের জায়গা রয়েছে এ দেশটিতে। জাহিদুল বলেন, শুধু শ্রমিক নয়, বিনিয়োগকারী হিসেবে অনেক দেশের মানুষ মাল্টাতে নাগরিকত্বের সুযোগ নিয়ে সেদেশে ব্যবসা করছে। তাই বাংলাদেশিরাও এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। তাই তিনি বলেন অনেক দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা মাল্টাতে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ গ্রহণ করে সেখানে ভালো মানের ব্যবসা গড়ে তুলতে পারে। যেহেতু নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ, তাই এ দেশটিতে নতুন ভাবে কাজের সুযোগ তৈরি করা যাবে।
জাহিদুল মনে করেন, বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা সে দেশে ব্যবসা শুরু করলে নতুন শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। সেখানে বাংলাদেশিদের নতুনভাবে যাওয়ার পথ তৈরি হবে। এছাড়াও দেশটির পাশেই ভূমধ্যসাগর থাকায় এখানে মাছ চাষের বিরাট এক সুযোগ রয়েছে। তাই মাছ চাষের মাধ্যমেও নানাভাবে আয় করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশিদের কাছে এ দেশটি তেমন পরিচিত না থাকায় বর্তমানে আমার এ সুবর্ণ সুযোগ হারাচ্ছি। তাই আমাদের উচিত নতুন নতুন শ্রমবাজার বের করে সেখানে শ্রমশক্তিকে কাজে লাগানো’।
মাল্টাই একমাত্র দেশ না যে পাসপোর্ট বা নাগরিকত্ব বিক্রি করে। ২০১১ সাল থেকে অস্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি ও সাইপ্রাস নাগরিকত্ব বিক্রির প্রোগ্রাম চালু করেছে। রেসিডেন্সি এ্যন্ড সিটিজেনশীপ প্লানিং ফার্ম ‘হেনলে এ্যন্ড পার্টনারস্’-এর প্রধান খ্রিস্টান কেইলিন-এর মতে এটা হলো একবিংশ শতকের ইনসিওরেন্স পলিসি। সরকারগুলি এখন নতুন রাজস্বের উৎস খুঁজছে। তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিভিন্ন এলাকার ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও অনেক দেশ এমন কর্মসূচী চালু করছে। ধনী ব্যক্তিরা এই ধরনের স্কিমগুলি ব্যবহার করে নিজ দেশের ঝামেলাপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে এবং তাদের সন্তানদের জন্য ব্যবসা চালানোর সহজ উপায় করে দিতে পারে।
অনেকেই মাল্টার নাগরিকত্ব কিনতে চায় এ কারণে যে, মাল্টা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সেঞ্জেনভুক্ত একটি দেশ। ফলে মাল্টার পাসপোর্টধারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত অধিকাংশ দেশে ঘুরতে, কাজ করতে এবং অবস্থান করতে পারে। মাল্টার নাগরিকত্ব বিক্রির প্রোগ্রাম জনপ্রিয় হওয়ার আর একটি কারণ হলো – এটি অপেক্ষাকৃত সস্তা এবং কম সময় লাগে। আবেদনকারীরা সাধারণত ১২ থেকে ১৮ মাসে তাদের পাসপোর্ট পায়। এমন সহজ সুযোগগুলো বাংলাদেশিরা হারাচ্ছে শুধুমাত্র এই দেশগুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাবে ।
জাহিদুল মনে করেন, আমাদের নতুন শ্রমবাজার বের করার জন্য এসব দেশের সুযোগগুলো গ্রহণ করতে হবে। কারণ নতুন শ্রমবাজার না তৈরি হলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ণের প্রবাহ কমে যাবে। তাই মাল্টার মতো দেশগুলোতে নতুন শ্রমবাজার তৈরির চেষ্টা করতে হবে বাংলাদেশিদের বলে মনে করেন জাহিদুল।
No comments:
Post a Comment