টাঙ্গাইলের মধুপুরে চারদিন আগে এক কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করার পর স্বজনদের খুঁজে পেয়ে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, চলন্ত বাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ওই তরুণীকে হত্যা করা হয়।
২৫ আগস্ট শুক্রবার রাতে ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে করে সিরাজগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রুপা প্রামাণিক (২৫) নামে ওই তরুণী সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন বলে জানান মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম। পরে ওই বাসের চালক, সুপারভাইজারসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বিবরণ পাওয়া যায় বলে জানান ওসি।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের মধ্যে তিনজন ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত থাকার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তাদের আদালতে পাঠানো হচ্ছে।’
২৫ আগস্ট শুক্রবার রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকা থেকে ওই তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর হত্যার আলামত থাকায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে মধুপুর পুলিশ। কিন্তু পরিচয় জানতে না পারায় ময়নাতদন্ত শেষে ২৬ আগস্ট শনিবার বিকেলে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে তাকে দাফন করা হয়। গণমাধ্যমে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ২৭ আগস্ট সোমবার রাতে মধুপুর থানায় গিয়ে ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করে তার পরিবার। পরে রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান ছোঁয়া পরিবহনের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত রূপা খাতুনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশে। ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে পড়ালেখা করার পাশাপাশি একটি কোম্পানির প্রোমশনাল ডিভিশনে কাজ করছিলেন তিনি। তার কর্মস্থল ছিল ময়মনসিংহ জেলা সদরে।
নিহতের বড় ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে গত শুক্রবার বগুড়ায় যান তার বোন। পরীক্ষা শেষে এক সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) বাসে ওঠেন। ওই সহকর্মীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় তিনি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় নেমে যান। আর ওই বাসেই রূপার ময়মনসিংহে পৌঁছানোর কথা ছিল।
হাফিজুর বলেন, ‘সঠিক সময়ে রূপা ময়মনসিংহে না পৌঁছানোয় সহকর্মীরা তার মোবাইলে ফোন করেন। এক যুবক ফোনটি ধরে বলেন, ফোনের মালিক ভুল করে সেটি ফেলে গেছেন। এরপর সংযোগ কেটে দেন। এরপর থেকেই ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। শনিবার সকালেও রূপা কর্মস্থলে না যাওয়ায় তার অফিস থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের কাছ থেকে রূপার নিখোঁজ থাকার কথা জানতে পেরে আমরা ময়মনসিংহ কোতয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। পরে মধুপুরে একটি লাশ পাওয়ার খবর মিডিয়ায় দেখে আমরা থানায় যাই।’
মধুপুরের ওসি শফিকুল বলেন, ‘রূপার পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর সোমবার রাতেই বাসের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন হাফিজুর। পরে ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ছোঁয়া পরিবহনের চালক, সুপারভাইজার, সহকারীসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায় তাদের কাছে। ছোঁয়া পরিবহনের বাসটিও জব্দ করা হয়।’
ওসি জানান, লাশ উদ্ধারের পর আলামত দেখে সন্দেহ হওয়ার কারণে অপমৃত্যুর মামলা না করে প্রথম দিনই পুলিশের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছিল। বাসের কর্মচারীদের গ্রেফতারের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেই সন্দেহেরই সত্যতা পান তারা। তিনি বলেন, ‘ওই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছে। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, কালিহাতী থেকে মধুপুর পর্যন্ত রাস্তায় চলন্ত বাসে পর্যায়ক্রমে রেপ করা হয় মেয়েটিকে।’
‘সেসময় মেয়েটি তাদের বলেছিল, সঙ্গে যা টাকা পয়সা আছে, তা নিয়ে যেন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ধর্ষণের পর ঘাড় মটকে, মাথা থেঁতলে তাকে হত্যা করে বাসের কর্মচারীরা লাশ রাস্তায় ফেলে চলে যায়’, বলেন তিনি।
৩ জনকে আদালতে পাঠিয়ে বাকি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখার কথা জানান ওসি। পরে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে জানিয়ে গ্রেফতার ওই পাঁচজনের নাম প্রকাশ করেননি ওসি।