মুসলমানদের কিবলা কাবাঘর আল্লাহ তায়ালার এক অপূর্ব সৃষ্টি। হজের মৌসুমে প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তাওয়াফ করতে মক্কায় গমন করেন। পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে মক্কা নগরীর অবস্থান হওয়ায় আল্লাহ তায়ালা ‘বাইতুল্লাহ’ বা ‘কাবাঘর’ মক্কাতেই স্থাপন করেন। আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা সর্বপ্রথম দুনিয়াতে কাবাগৃহ নির্মাণ করে এখানে ইবাদত করেন। কাবাঘরটি আল্লাহর আরশে মুয়াল্লার ছায়াতলে সোজাসুজি সপ্তম আসমানে অবস্থিত। সম্মানিত মসজিদে বাইতুল মামুরের আকৃতি অনুসারে এর ভিত্তি স্থাপন করা হয়। আল্লাহ তায়ালা কাবাগৃহকে মানবজাতির ইবাদতের কেন্দ্রস্থল রূপে নির্দিষ্ট করেন।
বেহেশত থেকে দুনিয়ায় পাঠানোর পর আদি মানব-মানবী হজরত আদম (আ) ও বিবি হাওয়া (আ)-এর মক্কায় মিলন হলে তাঁরা উভয়ে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাঁদের দোয়া কবুল করেন এবং বাইতুল মামুরের আকৃতিতে স্থাপিত কাবাগৃহকে ইবাদতের কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করে দেন। কাবাঘরকে লক্ষ্য করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ (কাবাঘর) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা মক্কায় অবস্থিত, এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি। এতে রয়েছে মাকামে ইবরাহিমের প্রকৃষ্ট নিদর্শন। যে এর ভেতরে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরে হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৬-৯৭)
ইসলামের পূর্ব থেকেই কাবাঘর তাওয়াফ ও হজ আদায়ের প্রচলন ছিল। হজরত আদম (আ) সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ শরিফে হজ আদায় করেন এবং আল্লাহর আদেশে কাবাগৃহ পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর আল্লাহ তাঁর বিভিন্ন নবীদের ওপর ওহি নাজিলের মাধ্যমে কাবাগৃহের নির্দিষ্ট অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী কাবাঘরের নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের কাজ চলেছে। আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহীম (আ) কাবাগৃহ পুনঃনির্মাণ সমাপ্ত করে দুনিয়াবাসীর উদ্দেশ্যে হজের আহবান করেছিলেন; স্বয়ং আল্লাহই তাঁকে এ নির্দেশ দিয়েছিলেন।
হজরত ইবরাহীম (আ) ও হজরত ইসমাইল (আ)-এর কয়েকশ’ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যথাক্রমে আমালেকা সম্প্রদায়, জোরহোম গোত্র, কুসাই বিন কিলাব, কুরাইশ, হজরত আবদুল্লাহ বিন যোবায়ের (রা), হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ও সুলতান মুরাদ প্রমুখ পবিত্র কাবাঘর পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার কাজ করেন। হজরত ইবরাহীম (আ) ও হজরত ইসমাইল (আ)-এর বংশধারা থেকেই বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স)-কে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়। নবুওয়্যাত প্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশ কাবাঘর সংস্কার সাধনের পর ‘হাজরে আসওয়াদ’ স্থাপন নিয়ে মতভেদ দেখা দিলে রাসূলুল্লাহ (স) স্বহস্তে কাবাগৃহে সর্বসম্মতিক্রমে যথাস্থানে কৃষ্ণপাথর স্থাপন করেন। ইসলামের ইতিহাসে ৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে নবম হিজরিতে হজের বিধান ফরজ হয়। পরের বছরে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (স) হজ আদায় করেন। তিনি যেখানে, যে সময়ে, যে তারিখে, যে নিয়মে যেসব আহকাম-আরকান পালন করেন, প্রতিবছর আট থেকে ১২ জিলহজ মক্কা মোকাররমা এবং এর ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নির্দিষ্ট নিয়মে সেভাবেই পবিত্র হজ পালিত হয়।
লেখক : পরিচালক, এশিয়ান ইনস্টিটিউট। সম্পাদক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি বার্তা, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
No comments:
Post a Comment