Social Icons

Tuesday, August 29, 2017

বাংলাদেশে নারীদের যৌন হয়রানির প্রধান কারণ কী বলে মনে করেন আপনি?

খবরের কাগজের পাতা থেকে শুরু করে ফেসবুকের পাতায় চোখ বুলালেই দেখা যাবে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। একদম প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানী অথবা বড় বড় শহরগুলোতেও এখন প্রকাশ্যেই ঘটছে নারী নির্যাতন এবং নারী লাঞ্ছনা, ধর্ষণ, যৌন হয়রানির মতো ঘৃন্য ঘটনাগুলো।
এখন নারীরা আগের থেকে অনেক বেশী সচেতন। নিজেদের রক্ষা করার মতো মানসিক প্রস্তুতি এবং মানসিক শক্তি তৈরি করে নিয়েই স্কুলেকলেজেটিউশনিতেবিশ্ববিদ্যালয়েকর্মক্ষেত্রে যাওয়া আসা করছেন। কিন্তু এই সচেতনতার সংখ্যাটাও খুব বেশী নয়। এবং সচেতন হয়েও রুখতে পারছেন না পথে ঘাটে বিভিন্ন ধরণের যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো।
সকলের সামনে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল "বাংলাদেশে নারীদের যৌন হয়রানির প্রধান কারণ কী?" কী মনে করছেন সকলেকেন এতো সচেতনতা এবং প্রতিরোধের পরেও দৈনিক দেশের কোন না কোন স্থানে বিভিন্নভাবে নানান ধরণের সহিংসতার শিকার হতে হচ্ছে নারীদের?
আমি জানতে চেয়েছিলাম সকলের নিজস্ব ভাবনাগুলো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কী কী কারণে নারীদের সাথে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ ঘটছে তার কারণ হিসেবে অনেকেই জানিয়েছেন তাদের ব্যক্তিগত মতামত। করেছেন কিছু গঠন মূলক আলোচনাও।
বহুজনের মতামত থেকে বাছাইকৃত কিছু মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। মতামতকারীদের পূর্ণ অনুমতি সাপেক্ষে পরিচয়সহ প্রকাশ করা হলো পাঠকদের সামনে।
ডাঃ মেজবাহ উল আজীজ (৩২) ,বাবর রোডমোহাম্মদপুরঢাকা। 
"স্কুল লাইফে সঠিক সেক্সুয়াল এডুকেশনের অভাবধর্মশিক্ষার ভুল ব্যাখাজাতিগত ভাবে বাঙালি জাতির নৈতিক অবক্ষয় এর সমন্বয়।" 
কামরুল হাসান সৌরভ, ডি.আই.আই.টি(সিএসই)ঢাকা।
"ব্যাপারটা সহজে বোঝার জন্য আসুন আগে নিজের সাথে কম্পেয়ার করে দেখি। আমি সৌরভ কেন একটা মেয়েকে যৌন হয়রানি করবো নাপ্রথমেই না করার কারন হিসেবে আমি মনে করি -
১/ এটা খুবই জঘন্য একটা কাজ। 
২/ এটা করা অন্যায়। 
৩/ এবং এটা করা পাপ। 
কিন্তু কাজটা যে জঘন্য সেটা আমার মাথায় কীভাবে আসলো? কারণ-
১/ আমার পরিবার আমাকে সে শিক্ষা দিয়েছে। 
২/ আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমাকে সে শিক্ষা দিয়েছে।
৩/ আমার ধর্মীয় মূল্যবোধ আমাকে সে শিক্ষা দিয়েছে। 
আমার মতে উপরিউক্ত তিনটি শিক্ষা যদি একইসাথে কারো থাকে তাহলে কোনো ছেলে যৌন হয়রানি করতে পারে না সেটা বাংলাদেশ হোক অথবা দুনিয়ায়।"
নওশাবা মাহজাবীন (২৬) শিক্ষার্থীতেজগাঁও
"আগে মনে করতাম যে শুধুমাত্র কিছু অসুস্থ মানসিকতার পুরুষদের কারণেই সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট হয়। দুঃখের বিষয় এখন কিছু মেয়েরাও এই ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী ভূমিকা রাখছে সমানতালে। আমি অনেক দিন খেয়াল করে দেখেছি যে অশ্লীল গেটআপে রাস্তা ঘাটে বের হওয়া মেয়েদের মানুষ চোখ দিয়ে গিলে খেলেও,মুখে কিছু তেমন বলেনা,হয়ত গাটসও নাই বলার। অবাক হই এই 'তেজ'টা বের করা হয় নিরীহ অবলা বাচ্চা মেয়ে থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়াচাকরিজীবী মধ্যবয়স্কা এমনকী ক্ষেত্র বিশেষে বয়স্ক নারীদের ওপরও! আরেকটা কথা না বললেই নয়পাশ্চাত্য সংস্কৃতিও আমাদের এত ক্ষতি করতে পারেনাই যতটা না ভারতীয় মিডিয়া করেছে। যৌনতা তারা আর্ট হিসেবে দেখাতে চাচ্ছে,তাদের সেক্যুলারিজম চোখে এটা সৌন্দর্য। কিন্তু আমাদের দেশে অবলীলায়বিনা বাধায় চলতে থাকা এসব মুভিআইটেম সং দেখে কী প্রভাব পড়ছে তা সবার জানা।"
আনজার আল মুনির শিক্ষার্থীসিলেট এমসি কলেজ।
"মূল্যবোধের অভাবই মূল কারণ। তাছাড়া নারীদের আত্মসচেতনতার ঘাটতি  ভীরুতা বিষয়টিকে আরো ভয়ংকর করে তুলছে।"

বদুল্লাহ আল রিফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ফিন্যান্স ২য় বর্ষ।
"এটা কোনো অপরাধ না, মজা করছি এমন মনোভাব। মেয়েটার দোষ, বোরকা পড়ে না কেনো এইসব বলে ইনিয়ে বিনিয়ে এমন মনোভাবকে সাপোর্ট দেয়া পার্টির আধিক্য।" 
ডাবেনজির বুশরা মেডিকেল অফিসারইস্পাহানী ইসলামিয়া আই ইন্সটিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল।
"১/ ছেলেদের পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এইসব ব্যাপারে ছোটবেলা থেকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া হয় না। বাবা মা আর সন্তানদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে না।অনেক গার্জিয়ান খুব কঠিন হন,অনেকে আবার একদমই শাসন করেন না। একই কথা স্কুল কলেজের শিক্ষদের জন্যও প্রযোজ্য। 
২/ সুস্থ বিনোদনের অভাব। খুব অল্প বয়সে ইন্টারনেটের লাগামহীন দুনিয়ায় প্রবেশ করা।
৩/ কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা এবং আইনের দীর্ঘসূত্রিতা আর যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া।
৪/ আমরা যারা ইভটিজিং এর ঘটনা চোখের সামনে ঘটলেও অন্ধ,বোবা এবং কালার মত আচরন করি,আমরাও এর জন্য দায়ী।
৫/ এছাড়া মেয়ে এবং মেয়েদের অভিভাবক সবসময় নিজেদের দুর্বল মনে করে। অনেক ক্ষেত্রেই  ধরনের ঘটনা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা।
৬/ আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,যত দোষ সব নন্দ ঘোষের মত,সব কিছুর দায় মেয়েদের পোশাক আর চলাফেরার উপর চাপিয়ে দেয়ার প্রাচীন সামাজিক রীতিএর পরিবর্তন না হলে ইভটিজিং কখনোই বন্ধ হবে না।সমাজের অধিপতি,রাজনীতিবিদঅভিভাবক,ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব আর সাধারন মানুষের সচেতনতা সবার আগে বাড়ানো জরুরি।"

সাইফুল ইসলাম, নর্দান ইউনিভার্সিটি(ইইই), ঢাকা।
"পরিবারের সাথে ছেলে মেয়েদের বন্ধুত্ব না থাকা সবচেয়ে বড় কারণ। এছাড়া ধর্মীয় অনুশাসন,পারিবারিক শিক্ষা অন্যতম কারণ।" 

সাদেক মাহমুদল হাসান (২৪) স্টামর্ফোড ইউনিভার্সিটিসিদ্বেশ্বরীঢাকা। 
"বাংলাদেশে নারীদের যৌন নির্যাতনের প্রধান কারণ গুলো হল-
নারীর পরনির্ভরশীলতা।
নারী যৌন শিক্ষার অভাব।
নারীর দুর্বল মনোভাব।
একজন নারী যখন শিক্ষিত হবেন। আর কাজ করবেন। তখন তিনি আর অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকবেন না।নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবেন।এছাড়াপুরুষদের মাঝে নারীর প্রতিশ্রদ্ধাশীল হওয়ার মনোভাব গড়ে উঠলে এবং আইনের শাসন আরও কঠোর হলে নারী যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভব।
তাছাড়া নারীরা নির্যাতিত যাতে না হয় এই ব্যপারে নারীদেরও সতর্ক থাকতে হবে। নির্যাতিত হতে হবে অথবা নির্সাতিত হওয়ার ঝুঁকি বা সম্ভবনা থাকে এইরকম আচরণ বা কাজ করা এবং স্থান থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি আমাদের পুরুষদের নিজেদের সংযত রাখতে হবে। প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ ক্ষেত্রে এই সব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে চলি তাহলে আলাদা ভাবে বড় কিছু করার প্রয়োজন নেই বলে মনে করি আমি। তা না হলে নারীর যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে পুরুষদের কে জনসমুক্ষে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি প্রদান করা উচিৎ।"
ফেরদৌসী আফসানা (১৮) লালমাটিয়া মহিলা কলেজসাভার।
"এক্ষেত্রে অনেক গুলো বিষয়ই উঠে আসে-
১/ শিক্ষার অভাব: অনেক অশিক্ষিতমূর্খ পুরুষরা নারীর হয়রানির প্রধান  অন্যতম কারণ। আপনি আমি চাইলেও তাদেরকে বুঝাতে পারবো না।যেমন- রাস্তাঘাটের যে বাটপারদিনমজুর শ্রমিক সহ অন্যান্য।
২/ নারীর পরনির্ভরশীলতা: নারীরা অপরের তথা পুরুষের উপরে অনেকাংশেই নির্ভরশীলএতে করে নারী একা কোনো জায়গায় চলাফেরার ক্ষেত্রে ইনসিকিয়র ফিল করে।পুরুষরা ভাবে একা নারী কি আর পারবেফলে তারা তাদের হয়রানি করে। নারীও না চাইতে সহ্য করে।
৩/ মূল্যবোধের অভাব: এক্ষেত্রে যে পুরুষরা নারীদের সাথে ঐরূপ আচরণ করে তারা শিক্ষিত হয়ে থাকে। শিক্ষিত হলেও তাদের কাছে এটা শুধু মজা মনে হয়, দোষ মনে করেন। আবার সমাজে এটাকে ছট ব্যপার বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কিছু বললেই বলে, এসব কিছুই না।৪/ অপরপক্ষের দোষারোপ: এতে পুরুষদের কিছু বলতে গেলে মেয়েদের ড্রেসআপ নিয়ে দোষারোপ করা হয়। আমার মতে, কে কি ড্রেসআপ করলো তা নিয়ে বলার অধিকার অপরপক্ষের নেই। তাই মেয়ে যাই পড়ুক না কেন, পুরুষের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করা উচিৎ না। তবুও আমরা ঐটাকেই তুলে ধরি।৫/ বিকৃত মনমানসিকতা: এতে মেয়ে আর ছেলে উভয়েরই দোষ থাকতে পারে। মেয়েরাও অনেক সময় এসবে প্রশ্রয় দেয়।৬/ সঠিক আইন না পাওয়া: সঠিক আইনের প্রযোগ না হওয়ার ফলে সবাই প্রশ্রয় পেয়ে যৌন হয়রানি করে থাকে।৭/ পাশ্চাত্য মনোভাব: স্বদেশী ভাব থেকে সরে আসা এবং উগ্রপন্থী মনোভাব অন্যতম কারণ।
৮/ ধর্মীয় শিক্ষার অভাব: ধর্মীয় শিক্ষা না পাওয়াআর পেলেও বিধিনিষেধ কোনোভাবেই না মানা।
৯/ নারীর আত্মরক্ষা: উন্নত দেশগুলোতে আত্মরক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়কিন্তু এক্ষেত্রে তারা তা পায়না ফলে কোনোকিছুতেই নিজেকে রক্ষা করতে পারেনা। এছাড়া কারণ খুজতে গেলে প্রচুর কারণ পাওয়া যাবে।"

সাদেক মাহমুদল হাসান (২৪) স্টামর্ফোড ইউনিভার্সিটিসিদ্বেশ্বরীঢাকা
"নারী কে নারী নয় মানুষ হিসেবে ভাবুন। একজন মানুষের স্বাভাবিক অধিকার নিশ্চিত করুন। পুরুষদের এই বিষয়ে সহযোগিতা একান্ত কাম্য। আর নারীদের জন্য বলবো, অধিকার অর্জন করার বিষয়ে। নিজের ভালোর জন্য নিজের অধিকার কে নিজেকেই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর পরিবার বা রাষ্ট্রে নারী ও পুরুষদের মাঝে বৈষম্য থাকলে সমাজে নারীদের উপরে যৌন নির্যাতন দৃশ্যমান হয়। আমাদের পুরুষদের বহুদিনের চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতি দূরীকরণ না হলে শুধুমাত্র আইন দিয়ে নারীদের প্রতি যৌন নির্যাতন দূর করা অসম্ভব। জন্মগত বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বৈষম্য অনেক ক্ষেত্রে নারীরা তার ভাগ্যের প্রাপ্তি বলে মনে করে। নারীকে শিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাহলে নারীর উপরে যৌন নির্যাতন রোধ করা সম্ভব।"
জারিফ (২৩) শিক্ষার্থীদিনাজপুর।
"মেয়েদের যৌন হয়রানির প্রধান কারণ হলো প্রতিবাদ না করা। এবং যৌনতাকে ট্যাবু করে রাখা। আমাদের সমাজে মেয়েদেরকে এমনভাবে বড় করা হয় যেখানে তাদের শেখানো হয় তার শরীরটাই তার সব কিন্তু তার শরীরে কোন নোংরা কীট হাত দিলে সেটা সে কাউকে বলতে পারবে না। তবে সব থেকে বড় বাধা হলো কোন প্রকার প্রতিবাদ না করে সহ্য করা। এর ফলে হয়রানকারী সাহস পেয়ে যায়। যখনই মেয়েরা প্রতিবাদ করা শুরু করবে তখনই এগুলো কমে যাবে। সেই সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদেরও এই বিষয়ে তৎপর হতে হবে।" 

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates