Social Icons

Sunday, August 27, 2017

দেশে চাকরীর অনিশ্চয়তায় বিদেশমুখী শিক্ষার্থীরা


শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, অস্থির রাজনীতি এবং চাকরির অনিশ্চয়তার কারণে আস্থাহীনতায় ভুগছে দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী। ফলে দিন দিন বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে তাদের মধ্যে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি মেলায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবং প্রতিক্রিয়াটি ফুটে উঠেছে দেশের উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে তাদের আস্থাহীনতা। আর এই প্রবণতায় বাংলাদেশ হারাচ্ছে মেধা এবং একই সাথে অর্থ।
ইউনেস্কোর সবশেষ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে শিক্ষার্থীদের যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এক বছরেই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশের বেশি। ২০১৬ সালে মোট ৩৩ হাজার ১৩৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেছে। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ১১২। উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যাওয়ায় আগ্রহী সিহাব ও মামুন নামে দুই শিক্ষার্থী বলেন, দেশে লেখাপড়া করে চাকরির নিশ্চয়তা নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে ‘বড় ভাইদের’ সঙ্গে রাজনীতির সভা-সমাবেশ করতে হয়। তা না হলে হলে সিট পাওয়াসহ নানা ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। কিন্তু এগুলো তাদের পছন্দ নয়, তাই বিদেশে পড়ার আগ্রহ ।
তারা আরও বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলো কাড়ি কাড়ি টাকা নিলেও লেখাপড়ার মান নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। তাই উন্নত জীবনের জন্য বিদেশের কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আগ্রহী তারা। শুধু ছাত্র নয় শিক্ষকরাও এখন রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। সেখানে ভালো লেখাপড়া তো দূরের কথা, জীবনের নিরাপত্তাও থাকছে না। একই সাথে পড়ালেখা শেষে নেই কোনো চাকরির নিশ্চয়তা। অথচ লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরির সুযোগ দেয় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যা  এ দেশের  শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে আগ্রহী করে তুলছে বিদেশে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে।
উচ্চশিক্ষায় সন্তানকে বিদেশে পাঠাতে আগ্রহী এনামুল হক নামে এক অভিভাবক জানান, বাংলাদেশের অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই। এছাড়াও তাদের অবকাঠামোগত সমস্যা প্রকট। তিনি বলেন, বেশিরভাগ বেসকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতি মানসম্মত নয়। ক্রেডিট ট্রান্সফারে বিড়ম্বনা, গবেষণার সুযোগ একেবারেই কম এবং যুগোপযোগী ও বাস্তসম্মত কারিকুলামের অভাব রয়েছে। তিনি অভিযোগ করন, অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত দেশের উচ্চশিক্ষা। যার কারণে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফলে নানা প্রতিবন্ধকতায় অগ্রগতি থমকে আছে দেশের উচ্চশিক্ষার।
উচ্চশিক্ষার এমন অবস্থা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকা বিভাগের অধ্যাপক সাতিল সিরাজ জানান, উচ্চশিক্ষা উন্মুক্ত। যার যেখানে সামর্থ্য, সেখানেই যাবে। তবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের আস্থা অর্জন করতে হবে। দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে কোনো বরাদ্দ নেই। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গভেষণা ক্ষেত্র নেই এটা মানা যায় না। তিনি আরও বলেন, বিদেশে যারা লেখাপড়া করতে যান এরা অনেকেই আর দেশে ফেরেন না। কর্মজীবন শুরু হয়ে গেলে তারা সেসব দেশেই স্থায়ী বসবাস করেন। এভাবে অর্থের পাশাপাশি অনেক মেধা হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ থেকে। এ জন্য আমাদের দেশের চাকরির সঙ্গে শিক্ষার ফারাক কমিয়ে আনতে হবে।
ইউজিসির এক হিসাবে দেখা যায়, এক বছরে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, আবাসন খরচসহ অন্যান্য ব্যয়ের হিসাব ধরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়। এটাও আমাদের উচ্চশিক্ষার একটি দিক। আবার অনেকে বিদেশে যাচ্ছে, সেটাও একটি দিক। তবে দেশীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আস্থা অর্জন করতে হবে। আর যারা যাচ্ছে তাদের অবশ্যই উচ্চশিক্ষা অর্জনের পর দেশে ফিরে জাতীয় উন্নয়নে মেধা কাজে লাগাতে হবে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষাবিদ।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates