মধ্যপ্রাচ্য বা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অল্প টাকায় পাড়ি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিদিনই নিম্ন আয়ের মানুষদেরকে বিদেশে পাঠাচ্ছে বাংলাদেশি দালালরা। আর এসব মানুষ নিজেদের উন্নতির জন্য কোন চিন্তা না করেই রাজি হয়ে যাচ্ছে অজানা দেশে পাড়ি দেওয়ার জন্য। কিন্তু ইউরোপ বা আমেরিকার মতো উন্নত দেশে যাওয়ার জন্য দালালরা আটছে অভিনব পন্থা। আর তা হলো কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ। এ পদ্ধতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিয়ে করে নাগরিকত্বের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অনেক দালাল হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
ইউরোপে কোনো একটি দেশের নাগরিকত্বের সুযোগ পেলে সে ব্যক্তি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভিসা ছাড়াই চলাচল করতে পারে। একদিকে স্বপ্নের দেশ ইউরোপ, অন্যদিকে স্থায়ী নাগরিত্বের সুবিধা থাকায় এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না অনেক বাংলাদেশিই। কিন্তু এ সুযোগ নিয়ে অনেককেই পড়তে হচ্ছে মহা বিপদে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাসপোর্ট বা কাগজপত্র পাওয়ার জন্য কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করে সাইপ্রাস যান বাংলাদেশের বদরুল জামান। তিনি জানান সাইপ্রাসে গিয়ে হাজার হাজার প্রবাসী এশিয়ান ও বাংলাদেশি ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’ এর মাধ্যেমে কাগজপত্র বানিয়ে নিচ্ছেন। যারা এ সুযোগে ইউরোপের কয়েকটি দেশে স্থায়ী বসবাসের সুবিধা পায়। তিনি বলেন, ইউরোপে সহজ ভাষায় ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’ হল টাকার বিনিময়ে বিয়ে। অর্থাৎ মেয়ে থাকবে মেয়ের জায়গায়, ছেলে থাকবে ছেলের জায়গায়। মাঝখানে দালালপক্ষ উকিলের ম্যাধ্যমে টাকার বিনিময়ে কাগজপত্রগুলো বানিয়ে দেয়।
সাইপ্রাসে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ বা চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করার নিয়ম বা কত টাকা খরচ হয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাইপ্রাসে যদি কেউ কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করতে চান তাহলে সে ইউরোপের মাত্র দুটি দেশের মেয়েদেরকেই বিয়ে করতে পারে। কারণ, এই দুই দেশ ছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর মেয়েরা এসব কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ সহজে করে না, আর করলেও তাদের অনেক টাকার চাহিদা পূরণ করতে হয়। তিনি জানান, কিন্তু কম খরচে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার নারীদের সহজে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করা যায়। তবে বর্তমানেও এখানেও সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান বদরুল। তিনি বলেন, দু’বছর আগেও কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করতে বাংলাদেশি টাকায় চার-পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করা যেতো। কিন্তু এখন আইন অনেক কড়াকড়ি হওয়ায় চুক্তিভিত্তিক বিয়েতে প্রায় আট-দশ লাখ টাকার উপর লেগে যায়।
এই আট-দশ লাখ টাকা খরচ করেও কি সফল হচ্ছে প্রবাসীরা? নাকি নিজের সর্বস্ব হারিয়ে ইউরোপের কাগজপত্র পাওয়ার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাচ্ছে তাদের? এ বিষয়ে বদরুল বলেন, চুক্তিভিত্তিক বিয়ের নামে এখন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিসহ শত শত এশিয়ান প্রবাসী। বিয়ে করার জন্য দালালের সঙ্গে চুক্তি হয় একরকম, কিন্তু শেষের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথমে দালালের সঙ্গে বিয়ে করা থেকে শুরু করে কাগজপত্র পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশিরা প্রায় ৮-১০ লাখ টাকার চুক্তি করেন। বিয়ের পর চুক্তি অনুযায়ী মেয়েকে রোমানিয়া বা বুলগেরিয়া থেকে নিয়ে আসতে হয়। মেয়েকে নিয়ে আসার পর থেকে শুরু হয় খরচের অত্যাচার। কারণ মেয়ের যাবতীয় খরচ বহন করতে হয় এ প্রবাসীদের। দালালের সঙ্গে চুক্তির বাইরেও তাকে টাকা দিয়ে খুশি রাখতে হয়, যাতে ওই মেয়ে কোন সমস্যা না করে।
বদরুল বলেন, যেখানে এক ইউরো লাগে সেখানে দশ ইউরো খরচ করতে হচ্ছে তাদের। শুধু তাই নয়, দালালদের ঠিক করা ব্যক্তিরা ম্যারেজ কন্ট্রাক্টের বাইরেও টাকা দাবি করে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সাথে। তিনি বলেন, মেয়েরা চুক্তির বাইরে আরো টাকা চাওয়া শুরু করে। আর না দিতে চাইলে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। কারণ ছেড়ে দিলে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ আর থাকবে না। এতে লোকসানে পড়বে বিয়ে করা সেই ব্যক্তি। ফলে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বে মেনে নিতে হয় তাদের বেআইনি আবদার।
এসব কারণে বৈধ ভিসা ছাড়া বিদেশে না যাওয়ার অনুরোধ জানান বদরুল জামান। কারণ যে কোনো উপায়ে অবৈধভাবে বিদেশে গিয়ে কোনো ভালো কাজ পাচ্ছে না প্রবাসীরা। এছাড়াও তাদের অবৈধভাবে যেতে বৈধ ভিসার থেকেও বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তাই দ্রুত এসব অবৈধ পদ্ধতি বন্ধ করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান এই প্রবাসী।
No comments:
Post a Comment