জুনের ৩০ তারিখ থেকে ই-কার্ডের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ শেষ হয় মালয়েশিয়ায়। এই সময়সীমা শেষ হওয়ার পরপরই মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন পুলিশ সাড়শি অভিযান চালিয়ে প্রচুর অবৈধ প্রবাসীকে আটক করে। তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়, আর বাকিরা বিভিন্ন অঞ্চলের ডিটেনশন ক্যাম্প বা বন্দী শিবিরে আটক রয়েছে।
মালয়েশিয়া সরকার ই-কার্ড দেয়া বন্ধ করলেও আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রি-হায়ারিং প্রক্রিয়া চালু রেখেছে। তবে রি-হায়ারিং ব্যবস্থায় বয়স ও নাম জটিলতায় মালয়েশিয়ায় প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশির বৈধতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
চলমান রি-হায়ারিং প্রক্রিয়ায় বৈধ হওয়ার প্রকল্পের আওতায় যেসব অবৈধ বাংলাদেশি রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেরই বয়স নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ জটিলতা নিরসন না হলে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি বৈধতা প্রাপ্তি থেকে বাদ পড়বেন বলে দেশটির অভিবাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এদিকে বয়স জটিলতা নিরসনে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত বাংলাদেশি। কিন্তু সঠিক কোনো সমাধান না পেয়ে অনেকে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ সমস্যার বিষয়ে দূতাবাস থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আবেদনকারীরাই বয়স জটিলতা সৃষ্টি করেছেন। পুরনো পাসপোর্টে এক বয়স আর নতুন পাসপোর্টে আরেক বয়স উল্লেখ করেছেন তারা। হাইকমিশন থেকে জানানো হয়, অবৈধ প্রবাসীরা রি-হায়ারিং এর জন্য নতুন পাসর্পোট করার সময় কাউন্টারে গিয়ে যেসব তথ্য উপস্থাপন করে সে অনুপাতে পাসপোর্ট আবেদন জমা নেয়া হয়। কিন্তু মালয়েশিয়া থেকে যখন আবেদনটি দেশে পাঠানো হয় তখন দেখা যায় একই ব্যক্তি নাম পরিবর্তন এবং বয়স বাড়িয়ে কমিয়ে আরও একটি পাসপোর্ট করেছেন। শুধু তাই নয়, মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনে যখন নতুন পাসপোর্ট নিয়ে যাওয়া হয় ফিঙ্গারিং দেয়ার জন্য তখন দেখা যায় ব্যক্তির নাম ঠিক আছে কিন্তু জন্ম তারিখ ঠিক নেই। নতুন পাসপোর্টে জন্ম তারিখ ৩৮ বছর আর পুরনো পাসপোর্টে জন্ম তারিখ ৪৮ বছর। এ ধরনের সমস্যা প্রবাসীরাই করছে বলে অভিযোগ করা হয় হাইকমিশন থেকে।
তবে মালয়েশিয়ার প্রবাসী চাকুরিজীবী নাঈম হাসান বলেন, দূতাবাস যে অভিযোগ করেছে তা কিছুটা ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, দালালদের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ায় গেছে। যার কারণে দালালরা বিভিন্ন নামে একাধিক পাসর্পোট তৈরি করে, কম খরচে অনেক অবৈধ প্রবাসীকে মালয়েশিয়া নিয়ে গেছে। যে কারণে বিভিন্ন সময় নাম একই থাকলেও বয়স পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। নাইম হাসান বলেন, প্রবাসীরা বৈধ হওয়ার সুযোগ নিতে চায়। কারণ কোনো প্রবাসীই অবৈধ থাকতে চায় না। কিন্তু দালালদের খপ্পরে পরে মালয়েশিয়াতেও নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। দালালরা অনেক অবৈধ প্রবাসীকে টাকার বিনিময়ে পাসর্পোট করে দিয়ে রি-হায়ারিং এর জন্য দূতাবাসে পাঠাচ্ছে। মূলত এ ধরনের পার্সপোর্টগুলোতেই বয়স ও নামের গরমিল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান প্রবাসী এ চাকুরিজীবী।
মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো এজেন্ট বা দালালের মাধ্যমে রি-হায়ারিং না করতে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। তবে যারা ই-কার্ড পেয়েছেন তাদের পাসপোর্ট না থাকলে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট নিতে হবে এবং চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রি-হায়ারিং এর কাজ শেষ করতে হবে বলেও জানানো হয়েছে। হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘গত ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ই-কার্ডের (এনফোর্সমেন্ট) মাধ্যমে ৯২ হাজার ৭৯১ জন অবৈধ বাংলাদেশি নিবন্ধিত হয়েছেন এবং ই-কার্ড পেয়েছেন। ই-কার্ড এর মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি। ই-কার্ড নিবন্ধনের সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হলেও ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে রি-হায়ারিং করতে পারবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এ প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এসব কর্মীদের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই মেয়াদ সংবলিত পাসপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ সময়ে যাদের নিয়োগ হবে না, তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে হবে।
No comments:
Post a Comment