এক সময়ের অন্যতম ধনী দেশ ইতালি বর্তমানে ইউরোপের অনেক দেশের অর্থনীতির থেকে পিছিয়ে পড়েছে । মূলত অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়া দেশটি এখনও আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারেনি। এর ফলে ইতালিতে বসবাসরত প্রবাসীরাও অনেক বছর ধরে দুর্দিনের মধ্যে জীবনযাপন করছে। ইতালিতে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে বেশিরভাগই রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন। এছাড়া অনেকেই জাহাজ নির্মাণ শিল্পে কাজ করেন। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন মেটাল ফ্যাক্টরিতেও কাজ করেন। বাকী যারা আছেন তাদের অনেকেই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
মূলত ইতালিতে যারা বিভিন্ন চাকরির সঙ্গে জড়িত তাদের বেতন অনেক কম। তাছাড়া প্রচুর পরিমাণে অবৈধ শ্রমিক ঢুকছে ইতালিতে, এটাও অন্যতম একটি কারণ। ফলে চাকরির বাজার হয়ে পড়ছে অস্থিতিশীল। মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে অনেককেই সমপরিমাণ টাকা ইতালি সরকারকে ট্যাক্স হিসেবেও দিতে হয়। এক সময়ের শিল্পোন্নত দেশ ইতালি ভারি শিল্পের অন্যতম উৎপাদন ক্ষেত্র ছিল। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে তাদের টিকে থাকাটা এক ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশেষ করে চীনের তৈরি পণ্যের মূল্য অনেক কম হওয়ায় ইতালির পণ্য গুণগত মানে ভালো হয়েও টিকতে পারছে না। এ ধরণের নানাবিধ কারণে ইতালির অনেক ভারি শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে চীনা তৈরি পণ্যের জয়জয়কার পৃথিবীব্যাপী। আবার তাদের পণ্যের উৎপাদন খরচও অনেক কম। তারা কম মূল্যে পণ্য উৎপাদন করে বিশ্ব বাজার ধরে ফেলছে। ফলে দিনকে দিনকে তাদের পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মত দেশগুলোর অভিবাসী শ্রমিকদের উপর। বৈধ বা অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। তাদেরকে টিকে থাকতে ইতালিতে অনেক কম বেতনে বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশি কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী খোকন প্রায় পাঁচ বছর ধরে ইতালিতে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইতালিতে আসার আগে প্রায় আট বছর বাহরাইন ছিলাম। ওখানে অনেক ভালোই ছিলাম। কিন্তু চিন্তা করলাম ইউরোপে গেলে আরো ভালো থাকতে পারবো । তখন ইতালির অবস্থা ভালোই ছিল। তবে যখন ভিসা হাতে পেলাম তখন বুঝলাম ইতালির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তবে ইতালিতে পার্মানেন্ট হতে পারলে ইউরোপের অনেক দেশে গিয়েই বসবাস করা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্রেক্সিট পূর্ববর্তী সময়ে যেমন ব্রিটেন যাওয়ার প্রবণতা ছিল অভিবাসী বাংলাদেশিদের। আর এখন এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে জার্মানি অভিমুখী। কিন্তু কোথাও গিয়ে এখন আর স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না।’
অন্যদিকে ইতালিতে যেসব বাংলাদেশি অভিবাসী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা অনেকটা নিরাপদ জীবনযাপন করে থাকেন। তারপরও তারা তাদের বাড়ি গাড়ি ফেলে ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন ব্রিটেন বা জার্মানিতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মূলত ইতালির ব্যবসা বাণিজ্যেও আগের মত নিশ্চয়তা আর নেই। ফলে এখন প্রবাসীরা নিরাপদ জীবনের সন্ধানে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছুটে বেড়ান।
ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশি খোকন ভয়েস বাংলাকে আরো জানান, ‘সত্যি বলতে ভারি শিল্পের দেশ ইতালিতে নিয়মিত ভাবেই শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে। মূলত চীনা পণ্যের কারণে ইতালির ভারি শিল্পে এসেছে দুঃসময়। শিল্পোন্নত ইতালির উৎপাদন ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়ার একটি অন্যতম কারণ এটি। যার প্রভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা হয়ে পড়ছে বেকার’।
এ ধরণের বিভিন্ন কারণে ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রতি মূহুর্তেই অনিশ্চয়তায় ভোগে। ইতালির মানবাধিকার ব্যবস্থা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো হলেও এখানে বর্ণবাদী মানসিকতাও এখন চোখে পড়ে। এক সময়ের শিল্পোন্নত দেশ ইতালি যেমন ধুঁকছে, তার সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ধুঁকছে প্রতি মূহুর্তের বিপন্নতাকে সঙ্গী করে।
No comments:
Post a Comment