মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেল সমৃদ্ধ দেশ কুয়েত। ১৯৭৮ সাল থেকে কুয়েত সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য তাদের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে দেয়। যার ধারাবাহিকতায়, সরকারি হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি কুয়েতে রয়েছে। কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দিন দিন তৈরি পোশাক বেচাকেনায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
এক সময় কুয়েতে স্বল্প মজুরির শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে অনেকেই জমানো পুঁজিতে হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা। বাংলাদেশি কারিগরদের তৈরি বাহারি ডিজাইনের বোরখা, হিজাব, সেলোয়ার কামিজ এরইমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। জীবন- জীবিকার তাগিদে প্রতিবছর হাজারো বাংলাদেশি শ্রমিক কুয়েতে ভিড় করলেও শুরুতে কারোই পছন্দসই পেশা বেছে নেয়ার সুযোগ থাকেনা। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় তিল তিল করে জমানো অর্থে গড়ে তোলেন মুদির দোকান, লন্ড্রী, বাংলা খাবারের হোটেল, মানি এক্সচেঞ্জ থেকে শুরু করে বাহারি তৈরি পোশাকের প্রতিষ্ঠান।
কুয়েতে ব্যবহৃত তৈরি পোশাকের মধ্যে এরইমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের তৈরি বাহারি ডিজাইনের বোরকা, হিজাব ও সালোয়ার কামিজের দোকানগুলো। কুয়েতের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় গেলে চোখে পড়বে রঙ বেরঙের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়িরা। এভাবে একদিকে তারা যেমন নিজেরা সমৃদ্ধ হয়েছেন, তেমনি সাবলম্বী করেছেন আরো বহু প্রবাসিকে। তাদেরই একজন মারুফ। কঠোর পরিশ্রমের ফলে কুয়েতে আসার ১৩ বছরের মাথায় আজ তিনি ১৪টি তৈরি পোশাক শোরুমের মালিক। তার প্রতিষ্ঠানের কারুকার্য খচিত মনকাড়া ডিজাইনের পোশাক এরইমধ্যে সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, ওমানসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তার দোকানের পোশাক তৈরি করতে কাজ করছে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় দেড়শ দক্ষ কারিগর।
তাছাড়া ফরওয়ানিয়া অঞ্চলের অরবিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রায় আড়াইশ’টি দর্জির দোকান। যেখানে বেশিরভাগ কারিগরই নারী। কুয়েতে দক্ষ অদক্ষ মিলিয়ে কাজ করছে প্রায় তিনি লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির। যার একটি বড় অংশ রেমিটান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। তবে ভিসা জটিলতার কারণে অনেক প্রবাসীর এমন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারকে কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান তারা।
No comments:
Post a Comment