ইউরোপের উন্নত দেশগুলো অনেক বাংলাদেশির কাছেই স্বপ্নের ঠিকানা। আমরা অনেকটা ধরেই নেই এ দেশগুলোতে কোন ভাবে ঢুকতে পারলেই আামদের আর ফিরে তাকাতে হবে না পিছনে। উন্নত দেশের উন্নত জীবন লাভের চিন্তায়ই অধিকাংশ পাড়ি জমায় ইউরোপের এ দেশগুলোতে। কিন্তু এসব দেশে পাড়ি জমানো অনেক বাংলাদেশির ঠাঁই এখন সেখানকার ফুটপাতে। টি-শার্ট, ঘর সাজানেরা কমদামি দ্রব্য, আইফেল টাওয়ারের রেপ্লিকা বা চাবির রিং বিক্রি করে তারা কোনমতে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে স্বপ্নের দেশে। ঠিকমত দুইবেলা ভালো মতো খাবারও জুটেছে না অনেকের ভাগ্য।
অনেক দুঃখ নিয়ে এ কথাগুলো বলছিলেন দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ফ্রান্সে বসবাসকারী ফরহাদ হুসাইন। তিনি জানান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি নাগরিকরা ফ্রান্সে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে। বর্তমানে ফ্রান্সে বসবাসরত প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছে যাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক আশ্রয়ে বসবাস করছে দেশটিতে। ফ্রান্সে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় প্রতিবেশি অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো হওয়ায় এ দেশটিতে অভিবাসী যাওয়ার পরিমাণ অনেক বেশি।
ফরহাদ জানান, আশ্রয় প্রার্থনাকালীন সময়ে মাসে ফ্রান্স সরকার ৩২০ ইউরো ভাতা দেয়। সঙ্গে চিকিৎসা সেবাও ফ্রি। আগে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল এমন আফ্রিকান দেশ থেকে যাওয়া মানুষের ভিড় দেশটিতে বেশি। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশিদের অবস্থানও অনেক বেড়েছে ফ্রান্সে। তিনি জানান, বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা থাকায় এতদিন সহজেই ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পাওয়া যেত। কিন্তু আশ্রয় প্রার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা বাড়ছে।
ফরহাদ বলেন, রাজনৈতিক আশ্রয়ে যাওয়া অনেক প্রবাসী কোনো কাজ পাচ্ছে না। রাস্তাঘাটে কাজ করতেও নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, হকারী কাজে পুলিশের বাধা ছাড়াও রয়েছে আফ্রিকান কালোদের উৎপাত। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তাদের প্রভাব ফ্রান্সে অনেক বেশি। জীবনযাত্রা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে সামান্য আয়ে কষ্টে কোনমতে জীবনযাপন করতে হচ্ছে এসব বাংলাদেশিদের। কম ভাড়ায় বাড়ি পেতে প্যারিস শহর থেকে অনেক দূরে কয়েকজন মিলে একসাথে বসবাস করছে। জন প্রতি ৩২০ ইউরো সরকারি সাহায্য পেলেও প্রতি মাসে তাদের খরচ প্রায় ৪শ ইউরো। ফলে বাড়তি টাকা রোজগারে বাধ্য হয়ে হকারি করতে হয় তাদের।
ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এনামুল কবীর জানান, কিছুদিন ফ্রান্স থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসে। দেশে ফিরে তারা ফ্রান্স সরকারকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা অস্থিতিশীল নয় বলে জানায়। এর ফলে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ফ্রান্সে বসবাস করা কঠিন হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ইউরোপের অন্যান্য দেশে অর্থনৈতিক সংকট এখনও কাটেনি। ইতালিতে পর্যাপ্ত কাজ না থাকায় দলে দলে লোক এখন ফ্রান্সে প্রবেশ করছে। স্পেনেও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তাদের অনেকেই বেকার হয়ে পড়ছে। তারাও ফ্রান্সে আসছে বলে জানান ফরহাদ।
প্রতিবেশী রুমানিয়ায় প্রতিবছর আটশ বাংলাদেশির ভিসা নিয়ে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও অবৈধভাবে প্রবেশ করছে আরো বেশি। তাদের লক্ষ্য ফ্রান্সে ঢোকা। ফ্রান্সে ওয়ার্ক ভিসায় বাংলাদেশিদের তেমন সুযোগ না থাকলেও নার্সিং সেক্টরে সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় বাধা ফ্রান্সের ভাষা। ফ্রেঞ্চ ভাষা ছাড়া সেখানে যাওয়া অর্থহীন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ফরহাদ বলেন, এভাবে ফ্রান্সে বাংলাদেশিদের যাওয়া বাড়তে থাকলে অবশ্যই রাজনৈতিক আশ্রয়ে যাওয়া বাংলাদেশিদের অবস্থা আরো করুণ হয়ে পড়বে। এছাড়াও তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত রাজনৈতিক আশ্রয়ে বাংলাদেশিদের বিদেশে যাওয়া প্রতিরোধ করা। আর তা না করতে পারলে ফ্রান্সে থাকা অনেক বাংলাদেশিকেই সেখান থেকে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তাই এ বিষয়ে জরুরি সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করেন এই ফ্রান্স প্রবাসী।
No comments:
Post a Comment