ইউরোপ মহাদেশের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত পোল্যান্ড। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ দেশটিতে পড়ালেখার খরচও অনেক কম| পাশাপাশি বাসস্থান ও চাকরীর সুবিধার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় এখন অন্যতম শীর্ষে পোল্যান্ড। এছাড়াও ভিসা পাওয়ার জটিলতা না থাকায়, প্রতিবছর প্রচুর বিদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে বেছে নিচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নিতে পারেন পোল্যান্ডকে।
কেন যাবেন পোল্যান্ড:
আধুনিক যুগে একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা চায় তার সবই রয়েছে পোল্যান্ডে। অনেক ইউরোপিয় দেশের তুলনায় জীবন-যাপন খরচ কম, সহজ ভিসা প্রক্রিয়া, এই ছাড়াও একজন শিক্ষার্থী পোল্যান্ডে পড়ালেখা শেষে ইউরোপের যে কোনো দেশে বসবাস, চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ পেয়ে থাকে। এছাড়াও বিশ্বের প্রথম সারির বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে দেশটিতে। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য একটি আদর্শ দেশ হতে পারে পোল্যান্ড।
পোল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা ও ভর্তি সেশন:
পোল্যান্ডে পড়ালেখার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি দুই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশটিতে উচ্চশিক্ষার স্তর চারটি- গ্রাজুয়েশন, পোস্ট গ্রাজুয়েশন, পিএইচডি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি। উচ্চতর ডিগ্রির পাশাপাশি পেশাগত ও বিশেষায়িত বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি বা ডিপ্লোমা কোর্সের সুযোগ রয়েছে পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কোর্সগুলো বিভিন্ন মেয়াদে করা হয়ে থাকে। ডিপ্লোমা ডিগ্রি ২ থেকে ৩ বছর, গ্রাজুয়েশন বা স্নাতক ডিগ্রি ৩ থেকে ৪ বছর, পোস্ট গ্রাজুয়েশন বা স্নাতকত্তোর ডিগ্রি১ থেকে ২ বছর এবং পিএইচডি সর্বোচ্চ ৩ বছর। প্রতি বছরে রয়েছে তিনটি করে সেমিস্টার। প্রতি সেমিস্টারের সময়কাল চারমাস। প্রথম সেমিস্টার জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয়টি এপ্রিল থেকে মে এবং তৃতীয় সেমিস্টার সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর। পোল্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোওতে বিভিন্ন বিভাগে পড়ানো হয়। এগুলো হলো- ইউনিভার্সিটি, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, মেডিক্যাল একাডেমিস, এগ্রিকালচারাল একাডেমিস, ইকোনমিক্যালি একাডেমিস, হায়ার টিচার এডুকেশনাল স্কুল, একাডেমিস অব মিউজিক, ফাইন আর্টস, থিয়েটার এন্ড সিনেমাটোগ্রাফি, একাডেমিস অব ফিজিক্যাল এডুকেশন, থিওলজিক্যাল একাডেমিস, মারচেন্ট মেরিন একাডেমিস, মিলিটারি স্কুল, স্কুল অব পুলিশ, স্টেট স্কুল অব হায়ার ভোকেশনাল এডুকেশন, নন পাবলিক স্কুল, নন স্টেট স্কুল অব হায়ার ভোকেশনাল এডুকেশন।
পড়াশোনার বিষয় :
পোল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অসংখ্য বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে মিউজিকোলজি, মিউজিক্যাল এডুকেশন, ফটো, ফিল্ম অ্যান্ড টিভি ক্যামেরা ইত্যাদি বিষয় পোল্যান্ডে সবচেয়ে আদর্শ হলেও অন্যান্য যুগোপযোগী বিষয়েও উচ্চশিক্ষা অর্জন করা যায়। যেমন- জার্নালিজম অ্যান্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন্স, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, আর্ট এডুকেশন, ইকোনমিক্স, এডমিনিস্ট্রেশন, মেডিক্যাল এনালাইসিস, বায়োটেকনোলজি, ফার্মেসি, ফিলোসফি, জিওগ্রাফি, ইনফরমেটিক্স, ফরেস্ট্রি, আইন, নার্সিং, থিওলজি, ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড হিউম্যান নিউট্রিশন, এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট টেকনোলজি, ডেন্টিস্ট্রি, আর্কিওলজি, এথনোলজি, আর্ট হিস্ট্রি, কালচারাল স্টাডিজ, কালচারাল হেরিটেজ প্রোটেকশন, পেপার অ্যান্ড পলিগ্রাফসহ ইন্জিনিয়ারিং বিষয়গুলো অন্যতম।
এছাড়াও বর্তমানে নার্সিং প্রোগ্রামের জন্য বিশ্বে পোল্যান্ড বিখ্যাত। বিদেশি শিক্ষার্থীরা নাসিংয়ে উপর গ্রাজুয়েশনের জন্য এই দেশটিকে বেছে নিতে পারে। কারণ নাসিংয়ের উপর পোলিশ সরকার নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এছাড়াও যারা নার্সিংয়ে পড়াশোনা করবে তাদেরকে সাথে সাথে পোল্যান্ডে ওয়ার্ক পারমিটে এবং স্থায়ী ভাবে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।
পড়াশোনার মাধ্যম:
পোলান্ডের রাষ্ট্রীয় ভাষা পোলিশ। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজিতে পাড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে।তবে স্মাতক বা স্মাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের আইইএলটিএস-এর স্কোর ৬ থেকে ৭ থাকতে হবে। আর ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য, ও লেভেল এবং এ লেভেলে বি গ্রেড থাকলেই হবে। তবে দেশটির প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই স্কুল অব পোলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার’ নামের বিভাগ আছে, যেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীরা পোলিশ ভাষা শেখার সুযোগ পায়।
আই ইএলটিএস বাংলাদেশে কোথায় করতে হয়–
বাংলাদেশে আইএলটিএস করার সুযোগ আছে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপিতে।
পোল্যান্ডের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ
নিকোলাস কোপারনিকাস ইউনিভার্সিটি (http://www.cc.uni.torun.pl)
ওয়ারশ ইউনিভার্সিটি (http://www.uw.edu.pl)
মারিয়া কুরি-স্কোডোস্কা ইউনিভার্সিটি (http://www.umcs.lublin.pl)
ক্লাকাউ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (http://www.pk.edu.pl)
পোল্যান্ডে পড়াশোনার বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে এই সাইট থেকে http://www.studyinpoland.pl
পড়াশোনার জন্য যে যে কাগজপত্র লাগবে:
একজন শিক্ষার্থীকে পোলেন্ডে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে কিছু কাগজপত্র লাগবে।
এগুলো হলো-
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া আবেদনপত্রের পূরণকরা কপি
সব পরীক্ষা বা কোর্সের সার্টিফিকেটের ইংরেজী ট্রান্সক্রিপ্ট
আইইএলটিএস পরীক্ষার মার্কশিট
স্কুল-কলেজের ছাড়পত্র
পাসপোর্টের ফটোকপি
আবেদন ফি প্রদানের প্রমাণপত্র
স্টুডেন্ট ভিসা ফি পরিশোধের রশিদ
আবেদন, ভর্তি ও ভিসা প্রসেসিং:
প্রথমেই দেখতে হবে, পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলোতে ভর্তির যোগ্যতা এবং টিউশন ফি বা শিক্ষা খরচ দেয়ার ক্ষমতা আছে কিনা। সব ঠিক থাকলে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য, বিষয়, পড়াশোনার মাধ্যম নির্বাচনের পর কাগজপত্র ও ফিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে আবেদনপত্র পাঠাতে হবে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাডমিশন অফিস’ এর কাছে। আবেদন পাঠানোর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে যোগ্য শিক্ষার্থীদের ঠিকানায় ‘অফার লেটার’ বা ‘অ্যাডমিশন লেটার’ পাঠাবে। অফার লেটার পাওয়ার পরই ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে পোল্যান্ডের দূতাবাসে।
তবে ঢাকায় পোল্যান্ডের কনস্যুলেট থাকলেও কোনো দূতাবাস নেই। তাই শিক্ষার মান যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশের শিক্ষা সার্টিফিকেটগুলো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে কন্স্যুলেটে সত্যায়ন করার পর নয়া দিল্লীর পোলিশ দূতাবাস থেকে প্রতি-সত্যায়ন করতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে সার্টিফিকেটগুলোর পোলিশ অনূবাদ প্রয়োজন হতে পারে, যা কেবল পোলিশ লাইসেন্সড ট্রান্সলেটর দ্বারা করাতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফিসহ প্রার্থীকে ভিসা আবেদনপত্র জমা দিতে হবে এই ঠিকানায়- 50-M Shantipath, Chanakyapuri, New Delhi 110 021, India ১১০০২১, ফোন: +৯১১১৪১৪৯৬৯৭৫, ই-মেইল polishconsulate@newdelhi.polemb.net ওয়েব http://www.newdelhi.polemb.net তবে তার আগে স্বচ্ছ ধারণা পেতে ফোনে কিংবা ইন্টারনেট থেকে জেনে নিতে পারেন প্রয়োজনীয় তথ্য। ডায়াল করতে পারেন এই নম্বরে +৯১ ১১ ৪১৪ ৯৬ ৯৭৫।
পড়াশোনা ও থাকা খাওয়ার খরচ :
দেশটিতে পড়াশোনা করতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাধারণত বছরে দুই হাজার ইউরো বা ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। তবে স্কালারশিপ পেলে এই খরচ অনেকটাই কমে যায়। পোল্যান্ডের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের থাকার সুযোগ রয়েছে, তবে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সুযোগ নেই। যার কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির পাশাপাশি একটি বড়ো অংকের টাকা খরচ হয় বাসা ভাড়ার পেছনে। একজন বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসন খরচ প্রতি বছর প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ ইউরো বা ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পযর্ন্ত খরচ হয়। এছাড়া আছে যাতায়াত ও খাওয়ার খরচ।
কাজের সুযোগ:
পোল্যান্ডের সরকার সে দেশে পড়াশোনা করতে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা পার্টটাইম কাজের সুযোগ দেয়। আর জুন থেকে আগস্ট – তিন মাস গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ফুলটাইম কাজ করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। আর এই ছুটিতে ৩৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের অনুমতি পায় তারা। এখানকার জনবহুল ও ব্যস্ত শহরগুলোতে কাজের সুযোগ তুলনামূলক বেশি। পোলিশ এবং ইংরেজিতে পারদর্শী হলে রেস্টুরেন্ট, দোকান ও শপিং মলে কাজ করে ঘন্টায় আট থেকে ১২ ইউরো আয় করা যায়। পোল্যান্ডে অন্তত্ ২ বছর পড়াশুনা শেষে একজন শিক্ষার্থী চাইলে ভিসার ক্যাটাগরি বিজনেস ভিসাতে পরিবর্তন করতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষার্থীকে ১৫ – ২৫ লাখ টাকার ব্যবসা দেখতে হবে । ছাত্র অবস্থায় প্রত্যেক বিদেশি শিক্ষার্থী দুই সেমিস্টার পর ওয়ার্ক পারমিট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন ।
স্থায়ীত্বের সুযোগ
স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি বা পিআর পেতে একজন শিক্ষার্থীকে ৫ থেকে ৬ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে পোলিশ কোন নাগরিককে বিয়ে করলে ৩ বছরে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাওয়া যায় ।
স্কলারশিপ :
পোল্যান্ডের সরকার প্রতিবছর শিক্ষা খাতে স্কলারশিপ বা বৃত্তি দিয়ে থাকে। এতে টউিশন ফি সহ কিছু খরচ বহন করে পোল্যান্ড সরকার। তবে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য অবশ্যই শিক্ষার্থীদের সব পরীক্ষায় ৫০ শতাংশের উপরে নম্বর থাকতে হবে। এছাড়াও এই স্কলারশিপ পেতে হলে অবশ্যই শিক্ষার্থীকে আইএলটিএস-এর স্কোর ৬ এর উপর থাকতে হবে। এছাড়াও, বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্কালারশিপ দিয়ে থাকে।
No comments:
Post a Comment