তেল চর্বি আর আলাদা ঘ্রানের কারনে খাসির মাংস অন্যান্য যেকোনো মাংসের চেয়ে আলাদা। খাসির মাংস দিয়ে অত্যান্ত সুস্বাদু নানান পদের বিরিয়ানি কাবাব সহ নানা রকম রান্না করা হয়। অনন্যা মাংসের তুলনায় দামটা কিছুটা বেশি হলেও ভোজন বিলাসী বাঙ্গালি খাসির মাংস খেতে ভুল করে না। তবে চলুন এবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে জানিয়ে দিই কিছু মজাদার রেসিপি।
১. খাসির ঝাল মাংসঃ
খাসির মাংসে সবচেয়ে পরিচিত আর মজাদার রেসিপি খাসির ঝাল মাংস। যারা ঝাল খেতে কিছুটা পছন্দ করেন তাদের জন্য এটা বেস্ট আইটেম। খুব সহজেই খাসির ঝাল মাংস রান্না করা যায়। চলুন দেখি সহজ এই রেসিপিটি.....................
উপকরণ :
১.খাসির মাংস ১ কেজি,
২.ছোট আকারের আলু ১০-১২ টি অথবা বড় আলু কিউব করে কাটা ।
৩.পেঁয়াজের কুচি আধা কাপ,
৪.মরিচের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ,
৫.আদা বাটা ১ টেবিল চামচ,
৬.রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
৭.টক দই আধা কাপ,
৮.ধনের গুঁড়া ১ চা-চামচ,
৯.হলুদের গুঁড়া ১ চা-চামচ,
১০.এলাচি ৩টি,
১১.দারুচিনি ৪-৫টি,
১২.তেজপাতা ৩টি,
১৩.তেল আধা কাপ,
১৪.লবণ পরিমাণমতো,
১৫. জিরার গুঁড়া ১ চা-চামচ,
১৬.কাঁচা মরিচ ৪-৫টি।
প্রণালি : খাসির মাংসগুলো টুকরো করে কেটে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে সুন্দর করে চালনী বাটিতে রেখে পানি ঝড়িয়ে নিতে হবে তার পর টক দই দিয়ে মেখে ২০ মিনিট মেরিনেট করে রেখে দিতে হবে। তারপর আদা,রসুন বাটা ও লবণ মাখিয়ে আরও ১৫/২০ মিনিট রেখে রাখতে হবে। পাত্রে তেলে পেঁয়াজের কুচি গুলো ভেজে বাদামি করতে হবে নিতে হবে । তার পর এর সঙ্গে আদা বাটা, রসুন বাটা, মরিচের গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, হলুদের গুঁড়া, এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা ও লবণ একসঙ্গে মিশিয়ে সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে ভালোভাবে মসলাগুলো মিশিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। ছোট বা কিউব করে কাটা আলুগুলো আগেই অন্য পাত্রে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এবার কষানো মসলায় আলু ও মাংসগুলো এক সঙ্গে ঢেলে দিন। এর পর সামান্য পানি দিয়ে সেদ্ধ করতে দিন। পানি কমে এলে তাতে জিরার গুঁড়া ও কাঁচা মরিচ দিয়ে আবার ঢেকে দিন। কিছুক্ষণ পরে দেখে নিন মাংসগুলো সেদ্ধ হয়েছে কি না। মাংস ভুনা ভুনা হলে নামিয়ে ফেলুন এবং গরম গরম পরিবেশন করুন।
২. খাসির রেজালাঃ
খাসির মাংস রান্না আর তার ওপর দের ইঞ্চি পুরু তেল জমে থাকবে না সেটা কি হয়। খাসির রেজালা হল সেই রান্না যেখানে মাখো মাখো মাংসের সাথে চর্বিযুক্ত ঝোল থকবে। চলুন সবার প্রিয় এই রেসিপিটি জেনে নিই।
উপকরণ :
১.খাসির হাড় ছাড়া মাংস ১ কেজি,
২.পেঁয়াজ ২ কাপ গ্রাম,
৩.টমেটো ২ পিস অথবা টমেটো সস,
৪.তেল পরিমাণ মত,
৫.হলুদ ১ টেবিল চামচ।
৬.মরিচ গুঁড়া ২ টেবিল চামচ,এলাচ ৪/৫ পিস,
৭.তেজপাতা ৪/৫ পিস,
৮.দারুচিনি পরিমাণ মতো,
৯.জয়ত্রী ৪/৫ পিস,জায়ফল অর্ধেক,
১০.জিরা গুঁড়া ২ টেবিল চামচ,
১১.আদা বাটা ২ টেবিল চামচ,
১২.রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ,
১৩.কাজুবাদাম বাটা ২ টেবিল চামচ,
১৪.ধনে গুঁড়া ১ টেবিল চামচ,
১৫.গুঁড়াদুধ ১০০ গ্রাম,
১৬.টক দই ১০০ গ্রাম,
১৭.ঘি ২ টেবিল চামচ ও
১৮.লবণ পরিমাণমতো,
প্রস্তুত প্রণালি : হাড় ছাড়া খাসির মাংসের মধ্যে কেটে রাখা পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা, কাজুবাদাম বাটা, টক দই, তেল, লবণ, জায়ফল, জয়ত্রী বাটা, মরিচ গুঁড়া, হলুদ, জিরা গুঁড়া ও ধনিয়া গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে কিছুক্ষণ মেরিনেত করে নিতে হবে তার পর অল্প আঁচে চুলায় বসিয়ে দিন। এবার ধিরে ধিরে নাড়তে নাড়তে রান্না করুন। মাংস সিদ্ধ হল কিনা খেয়াল রাখবেন। মাংস সিদ্ধ হয়ে এলে এর ভিতর গরম মসলার গুঁড়া, ঘি এবং ভাজা জিরার গুঁড়া, গুঁড়া দুধ দিয়ে আবার নেড়ে নিন তার কিছুক্ষণ পর নামিয়ে নিন। তার পর মাংসের ওপর একটু বেরেস্তা ছিটিয়ে পরিবেশন করুন গরম গরম খাসির রেজালা।
৩.খাসির কোরমাঃ
কোরবানির ঈদ আর খাসির করমা হবে না তাই কি হয়। খাসির মাংসের মজাদার রান্নার মধ্যে খাসির কোরমা উন্নতম। চলুন দেখি নিই এই মজাদার রান্নার সহজ রেসিপি.........।
উপকরণ :
১.খাসির মাংস ১ কেজি,
২.দেশি পেঁয়াজকুচি ১/২ কাপ,
৩.পেঁয়াজবাটা ১/৪ কাপ,
৪.রসুনবাটা ২ চা-চামচ,
৫.লবণ ২ চা-চামচ,
৬.ঘি ১/২ কাপ,
৭.কাঁচা মরিচ ৮/১০,
৮.আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ,
৯.দারচিনি বড় ৪/৫ টুকরা,
১০.তেজপাতা ২,
১১.এলাচি ৪/৫,
১২.টক দই ১/২ কাপ,
১৩.চিনি ৪ চা-চামচ,
১৪.কেওড়া ২ টেবিলচামচ,
১৫.তরল দুধ ২ টেবিল-চামচ,
১৬.লেবুর রস ১ টেবিল-চামচ,
১৭.জাফরান ১/২ চা-চামচ,
প্রণালি: খাসির মাংসগুলো কেটে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে সুন্দর করে চালনী বাটিতে রেখে পানি ঝড়িয়ে নিতে হবে তার পর সব বাটা মসলা যেমন গরম মসলা, টক দই, সিকি কাপ ঘি ও লবণ দিয়ে মেখে হাত ধোয়া অল্প পরিমাণ পানি দিয়ে ঢেকে মাঝারি আঁচে চুলায় বসিয়ে দিন। পানি কমে গেলে কেওড়া ও কাঁচা মরিচ দিয়ে আবার হালকা নেড়ে ঢেকে দিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর অন্য একটি চুলায় বাকি ঘি গরম করে পেঁয়াজকুচি সোনালি রং করে ভেজে মাংসের হাঁড়িতে দিয়ে বাগার দিন। তারপর চিনি দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। ৫/৭ মিনিট পর ঢাকনা খুলে দুধে ভেজানো জাফরানগুলো ওপর থেকে ছিটিয়ে দিয়ে আরও ৫/৬ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে । তারপর ঢাকনা খুলে লেবুর রস দিয়ে হালকা নেড়ে আঁচ একেবারে কমিয়ে তাওয়ার ওপর ঢেকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মতো দমে রাখুন। যখন কোরমা মাখা মাখা হয়ে বাদামি রং হবে এবং মসলা থেকে তেল ছাড়া শুরু করবে, তখন নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
৪. খাসির রানের রোস্টঃ
কোরবানি ঈদে খাসির আস্ত লেগ রোস্ট অনেক পছন্দের একটি আইটেম। নতুন জামায় অথবা যে কেউ এ এই খাবার খেতে পছন্দ করে। খুব সৌখিন ধরনের রান্নার মধ্যে খাসির লেগ রোস্ট উন্নতম।
উপকরণঃ
১. ১ কেজি ওজনের খাসির রান,
২.পেঁয়াজ ২ কাপ,
৩.মিষ্টি দই ১ কাপ,
৪.দুধের ননি আধা কাপ,
৫.আদা বাটা ১ টেবিল চামচ,
৬.রসুন বাটা আধা টেবিল চামচ,
৭.পেঁপে বাটা ২ চা-চামচ,
৮.টমেটো কুচি ১ কাপ,
৯.সয়াবিন তেল পরিমাণ মতো,
১০.গরম মসলা,
১১.জয়ফল-জয়ত্রী বাটা আধা চা-চামচ,
১২.ময়দা ১ টেবিল চামচ,
১৩.কিশমিশ ও বাদাম কুচি পরিমাণ মতো।
প্রণালিঃ খাসির আস্ত রান পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। টিস্যু পেপার বা পরিষ্কার শুকনো কাপড় দিয়ে পানি শুষে নিতে পারেন। এবার ময়দা ও লবণ মাখিয়ে আস্ত রানটি তেলের মধ্যে হালকা জ্বালে ১০ মিনিটের মতো ভেজে নিন। এবার অন্য একটি বড় হাঁড়িতে সব উপকরণ দিয়ে খাসির রানটি ডুবো পানিতে ঢাকনা দিয়ে ডেকে ২/৩ ঘণ্টা সেদ্ধ করতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে সিদ্ধ হয়েছে কিনা দেখে নিন যদি মাংস সিদ্ধ না হয় তবে প্রয়োজনে আবার পানি দিতে হবে। পানিটা ঘন হয়ে এলে এর সঙ্গে কিশমিশ ও বাদাম মিশিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। এভাবেই তৈরি হবে মজাদার লেগ রোস্ট বা রানের রোস্ট ।
No comments:
Post a Comment