২০১২ সালে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ ও ব্রাজিল কুটনৈতিক সম্পর্কে যুক্ত হয়। এখন বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ভিসা নিয়ে ব্রাজিল যাওয়া সম্ভব এবং অনেকেই যাচ্ছে। অন্যান্য দেশ থেকে ব্রাজিলে অনেক সহজে বসবাসের আনুমতি পাওয়া যায়। এমনকি অল্প সময়ে সেদেশের নাগরিকত্বও পাওয়া যায়। গত বছরেও অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি তাদের পরিবার ও সন্তান নিয়ে ব্রাজিল গিয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করেছেন এবং তারা সেখানে ভালো আছেন। সম্প্রতি ব্রাজিলের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন – ২০১৭ সালের মধ্যে হয়তো আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের মত ব্রাজিলে আরও বেশি বাংলাদেশি ও অন্যান্য দেশি প্রবাসীরা পরিবার নিয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করবে। বাংলাদেশিদের সম্পর্কে ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে বেশ কিছু ইতিবাচক ধারণা রয়েছে। তারা মনে করে বাংলাদেশিরা খুবই শান্তিপ্রিয়, আইন মেনে চলা মানুষ। এরা কেউ কখনও বেআইনিভাবে কোনো কার্যক্রম বা অপরাধের সাথে জড়িত হয়না। ব্রাজিলে বসবাসরত ছোট কমিউনিটি রয়েছে বাংলাদেশিদের। কমিউনিটির লোকদের সম্পর্কে নিজের এমন ধারণার কথা জানিয়েছেন ব্রাজিলের ইনস্টিটিউট অব মাইগ্রেশন অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (আইএমএইচআর) পরিচালক অভিবাসী কমিউনিটির ‘মা’ খ্যাত রসিডা মিলেচি।
জানা যায় ব্রাজিলের অভিবাসী কমিউনিটির সুখ-দুঃখের সাথী প্রবীণ এ নারীকে সবাই ‘মা’ বলেই সম্বোধন করেন। একসময় ব্রাজিলে বসবাসরত বাংলাদেশিদের আগমন, কঠিন সময় পার করে বৈধতা পাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন ‘মা’। সিডা মিলেচি বাংলাদেশিদের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ বিপুল জনসম্পদের একটি দেশ। এই দেশ থেকে শ্রমশক্তি আমদানি করলে ব্রাজিল লাভবান হবে। এরইমধ্যে ২০১১ থেকে ২০১৩ সালে ব্রাজিলের সামামবাইয়া ডিস্ট্রিক্টে বসবাসরত বাংলাদেশিদের উপর করা আমাদের একটি জরিপে ব্রাজিলের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের সম্ভাবনাময় শ্রমশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। ‘রিফিউজি, মাইগ্রেশন অ্যান্ড সিটিজেনশিপ’ নামে একটি প্রকাশনা এই প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে সিডা মিলেচি বলেন, ব্রাজিলের মিশ্র কমিউনিটিতে খুব সহজেই মানিয়ে নেওয়ার মত ক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশিদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাজের সুযোগে দারিদ্রের কারণে অনেকেই বিভিন্ন দেশ ঘুরে ব্রাজিলে ঢুকেছে, তাই আগের অভিবাসন অভিজ্ঞতাও থাকে এদের। অন্যদিকে, ইন্ডাস্ট্রি সেক্টরে ব্রাজিলে শ্রমিকের স্বল্পতা টাকায় খুব সহজেই সেখানে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
ব্রাসিলিয়া বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্যা এফেয়ার্স নাহিদা রহমান সুমনা বলেছেন, সিডা মিলেচির মাধ্যমে আইএমএইচআর’র সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০০ জন বাংলাদেশি ব্রাজিলে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন। ব্রাজিলে বাংলাদেশিদের সংখ্যা কেমন হবে এমনটি জানতে চাইলে নাহিদা রহমান সুমনা বলেন, ইমিগ্রেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ব্রাজিলের ২০১০-১৫’আর জরিপ অনুযায়ী প্রায় চার হাজার বাংলাদেশির বসবাস ব্রাজিলে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ বৈধভাবে বসবাস করছেন, বাকী ২০ শতাংশও বৈধতার পথে। ব্রাজিলের অন্যতম বড় শহর সাওপাওলোতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির বসবাস বলে বলেন নাহিদা। পল্ট্রি প্রসেসিং প্লান্টেই অধিকাংশ বাংলাদেশি কাজ করেন এমন মন্তব্য করে চার্জ দ্যা এফেয়ার্স জানান, কিছু কিছু বাংলাদেশি নিজেরাই ছোট বিজনেস খুলে বসেছেন, কেউ কেউ কাজ করছেন পেইন্টিং, দোকান কর্মচারী হিসেবে। এছাড়াও সেখানকার বাংলাদেশিরা জানান, ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখে এবং তাদের সুবিধা অসুবিধায় পাশে থাকার চেষ্টা করে।
No comments:
Post a Comment