Friday, February 26, 2016
সাকিবের সমালোচনাতেই সমাধান নয়
৮১২১ রান, ৪০৪ উইকেটের সঙ্গে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ২১টি ম্যাচসেরা আর ৮টি সিরিজ সেরার পুরস্কার আছে তাঁর কাপবোর্ডে। তিনি, মানে সাকিব আল হাসানকে মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ আরো অনেকে বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার’। কিন্তু সেই ‘চ্যাম্পিয়ন’ সাম্প্রতিক সময়ে ‘রানার-আপ’ও নন, বরং ভারত ম্যাচের পর রীতিমতো সমালোচিত হচ্ছেন প্রবলভাবে। শৃঙ্খলাজনিত কারণে সমালোচিত এবং দণ্ডিত হয়েছেন একাধিকবার, তবে ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর এই প্রথম ক্রিকেটীয় কারণে কাঠগড়ায় দেশের শীর্ষ তারকা। অবশ্য সব সমালোচনাই হচ্ছে সাকিবের অগোচরে। আপাতত তাঁর জন্য শ্রদ্ধার এটুকু জায়গাই বরাদ্দ! সমালোচনা হচ্ছে, তবে আড়ালে। যেমনটা দেখা গেছে তাসকিন আহমেদের বলে সাকিব পয়েন্টে ক্যাচ ফেলার পর পুরো দলের প্রতিক্রিয়াতেও। ক্লোজশটে তাসকিনকে দেখা গেল লাজুক হাসছেন। বাকিদের প্রতিক্রিয়া দেখে প্রেসবক্সের অনেকেরই বিভ্রম হয়েছিল বল বুঝি প্রথম বাউন্সের পর গেছে সাকিবের হাতে, এতটাই নির্মোহ দেখিয়েছে মাশরাফিদের। অথচ পয়েন্টের ওই ফিল্ডার অন্য কেউ হলে তাত্ক্ষণিক আকাশ ভেঙে পড়ত তাঁর ঘাড়ে! সামান্য মিস ফিল্ডিংয়েও তো ধিক্কারের তুবড়ি ছোটে ফিল্ডারদের দিকে। সেখানে সাকিব মহামূল্য ওই ক্যাচ ফেলার পরও সবাই এমন নির্লিপ্ত কেন? উত্তরটা সহজেই অনুমেয়। সাকিব দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন, ক্যাচ-ট্যাচ সাধারণত ফেলেন না। তা ছাড়া সেরা ফিল্ডারের হাত গলেও এক-দুবার বল বেরোতে পারে, সাকিবের ক্যাচ ফেলাটাও তাই ক্ষমাযোগ্য ক্রিকেটীয় এ ব্যাখ্যায়। তার পরও তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কেউ দেখাননি ফিল্ডারটি হাই প্রোফাইল সাকিব বলেই। কিন্তু ফিসফাস তো আর থেমে নেই। টিভি রিপ্লে দেখে অনেকেরই মনে হয়েছে ক্যাচের জন্য তৈরিই ছিলেন না সাকিব। পয়েন্টে দাঁড়ানো ফিল্ডার যদি ক্যাচের জন্য তৈরি না থাকেন, তাহলে তা খুবই চিন্তার কারণ। এ নিয়ে বোর্ড কর্মকর্তা হয়ে টিমেও ছড়িয়ে পড়া প্রশ্ন, প্রায় সারাক্ষণ বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করা সাকিব ওই ওভারে কেন পয়েন্টে দাঁড়িয়েছিলেন, যেখানে একই পজিশনে বিশেষজ্ঞ মনে করা হয় সাব্বির রহমানকে? কাল দিনভর ঘোরাঘুরি করে যেটুকু বোঝা গেছে, তাতে এটা পরিষ্কার যে, প্রশ্নটি সাকিবের কাছে যায়ইনি! যেমন যায়নি নিজের চোখে ফিল্ডারের হাতে বল জমা হতে দেখেও কেন তিনি রান নেওয়ার চেষ্টা করলেন? কেনই-বা ইদানীং তাঁকে দেখে বিভ্রান্ত মনে হচ্ছে? কেন তিনি ছন্দ ফিরে পাচ্ছেন না? টানা ক্রিকেট খেলে তিনি কি ক্লান্ত নাকি অন্য কিছু? এই ‘অন্য কিছু’ নিয়েই আলোচনা হচ্ছে বেশি। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, দলের কম্বিনেশনের কথা ভেবে কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে যে ব্যাটিং অর্ডার সাজিয়েছেন, সেটি নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন সাকিব আল হাসান। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর পছন্দের জায়গা তিন নম্বর। কিন্তু কোচ সাকিবকে পাঁচ কিংবা ছয় নম্বরে খেলাতে বদ্ধপরিকর। কোচের যুক্তি দলের প্রয়োজনটা আগে। আর সে জন্যই সাকিবের পরে ব্যাট করা উচিত। তিনে সাব্বির রহমান সফল হওয়ায় নিজের ধারণার পক্ষে বোর্ডের শীর্ষ মহল থেকে সর্বোচ্চ সমর্থনও পাচ্ছেন হাতুরাসিংহে। কিন্তু সাকিব নিজে এ নিয়ে অসন্তুষ্ট বলেই খবর। তাতে দুয়ে-দুয়ে চার মিলিয়ে তাঁর সাম্প্রতিক ব্যর্থতার পেছনে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তনজনিত অস্বস্তিকে একমাত্র কারণ বলে চিহ্নিত করেছে নীতিনির্ধারক মহল। তবে এ জন্য সাকিবের প্রতি সহমর্মিতার পরিবর্তে ঘনীভূত হচ্ছে বিরোধিতা। প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার লাইসেন্সও নাকি দেওয়া হয়েছে কোচকে। কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়াই যায়। কিন্তু একজন সাকিব আল হাসান তো আর ভূরি ভূরি নেই। তাই সাকিবের বিবর্ণ ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তেমন হাহাকারই শোনা যায় মাশরাফি বিন মর্তুজার কণ্ঠে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও পাকিস্তান সুপার লিগ চলাকালে অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি চিন্তিত সাকিবের রান না পাওয়া দেখে।’ বোর্ড সভাপতির সে চিন্তা দূর হওয়ার মতো কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি। ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির ঠিক আগে আগে এমন পরিস্থিতি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে অধিনায়ক মাশরাফিকেও, ‘একসঙ্গে আমাদের কয়েকজন ফর্মে নেই। এটাই মূল সমস্যা। তারা ফর্মে ফিরলে ভালো কিছুই দেখবেন।’ সেই তাঁরা বলতে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদ উল্লাহদের সঙ্গে সাকিবকেও ব্র্যাকেটবন্দি করে থাকবেন মাশরাফি। বোলিংয়ে মেরেকেটে ‘পাশ’ হলেও ব্যাটিংয়ে নিজের মানের ধারেকাছেও নেই সাকিব। অথচ ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং মিলিয়ে টি-টোয়েন্টির দুর্দান্ত প্যাকেজ বলেই তো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এত চাহিদা সাকিবের। কিন্তু সে প্যাকেজটা সম্প্রতি প্রত্যাশিত মান স্পর্শ করছে না। কেন? এর উত্তর নয়, জাতীয় দলের স্বার্থেই এর সমাধান জরুরি। সমাধান হতে পারে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সাকিবের খোলামেলা আলোচনায় কিংবা আরো ওপরের কোনো আলোচনার টেবিলে। যে আলোচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে দলীয় স্বার্থ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment