তবে বন্দীদের ছেড়ে দিলে তারা পুনরায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবে- এই যুক্তিতে রিপাবলিকানরা ওবামার পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছে। তবে কংগ্রেস এ প্রস্তাবের অনুমোদন না দিলে প্রেসিডেন্ট ওবামা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করার কথা জানান।
পৃথিবীর কুখ্যাত কারাগারগুলোর তালিকা তৈরি করলে প্রথমেই উঠে আসবে গুয়ানতানামো বে বন্দীশিবিরের নাম। কিউবার দক্ষিণ পূর্বে গুয়ানতানামো উপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ঘাঁটিতে ২০০২ সালে নির্মাণ করা হয় এই বন্দীশিবির। সেখানে বন্দিদের ওপর নির্মম নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা বিশ্বব্যাপী নানা বিতর্কের জন্ম দেয়।
বিতর্কের অবসানে ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বারাক ওবামা কারাগারটি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দেয়া এক ভাষণে ওবামা এই কারাগার বন্ধের একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তুলে ধরেন। যা এরইমধ্যে মার্কিন কংগ্রেসে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গুয়ানতানামো বে'র ৯১ জন বন্দির মধ্যে ৩৫ জনকে চলতি বছরের মধ্যে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে। এবং বাকিদের পর্যায়ক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি স্থানে স্থানান্তর করা হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে বলেও জানান প্রেসিডেন্ট ওবামা।
বারাক ওবামা বলেন, 'আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া কাউকে অনির্দিষ্টকাল আটকে রেখে নির্যাতন করা মার্কিন মূল্যবোধবিরোধী। এজন্য আমরা এ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। গুয়ানতানামো বে কারাগারটি চালু রাখলে বছরে ৪৫ থেকে ৬৫ কোটি ডলার খরচ গুনতে হয়। বন্দিদের দেশের ভেতরে রেখে বিচার করা হলে বছরে সাড়ে ৬ থেকে সাড়ে ৮ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে।'
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ওবামার এই পরিকল্পনার ভূয়সী প্রশংসা করলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় রিপাবলিকানরা। এতে মার্কিন নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে উল্লেখ করে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রিপাবলিকান মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এই পরিকল্পনাকে অবাস্তব ও বিপদজনক বলে আখ্যা দেন।
মার্কো রুবিও বলেন, 'গুয়ানতানামো বে কারাগার কোনভাবেই বন্ধ করা যাবে না। সেখানকার বন্দিরা আমাদের শত্রু। তারা ছাড়া পেলে আবার আমাদের ওপর হামলা করবে।'
এসব সমালোচনার জবাবে হোয়াইট হাউজ জানায় বন্দিদের বিভিন্ন সুরক্ষিত ও বিশেষভাবে নির্মিত কারাগারে রেখে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তাই নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ার কোন আশঙ্কা নেই।
বারাক ওবামা বলেন, 'গুয়ানতানামো বে'র উদাহরণ দেখিয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের দল ভারী করছে। তাই এই বন্দীশিবির বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই।'
কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ হিসেবে এবং মার্কিন মূল্যবোধ রক্ষায় এই বন্দীশিবির বন্ধের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ওবামা। তবে কংগ্রেস এ প্রস্তাবের অনুমোদন না দিলে প্রেসিডেন্ট ওবামা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করার কথা জানান। এদিকে সামনের মাসে ওবামার হাভানায় সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
No comments:
Post a Comment