বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রধান সন্দেহভাজন আসামি নূর হোসেনের সহযোগীরা প্রায় ২ বছর নিষ্ক্রিয় থাকার পর স্বরূপে ফিরছে। সেভেন মার্ডারের অন্যতম কারিগর নূর হোসেন কারাগারে বন্দী থাকলেও এখন কৌশল পাল্টিয়েছেন। ব্যবহার করছেন নিকটজনদের। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কাশিমপুর কারাগারে বন্দী থেকেও নূর হোসেন তার লোকদের দিয়ে চাঁদার টাকা তুলছেন। সেই টাকায় মামলার তদবির হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব জায়গায় চলে যাচ্ছে টাকা। আগামী ৩ মাসের মধ্যে নূর হোসেন জামিনে মুক্তি পাবেন বলে তার লোকেরা বলে বেড়াচ্ছে।
চিটাগাং রোডে বহুল আলোচিত ট্রাকস্ট্যান্ডে নূর হোসেন যে অফিসে বসে রাজত্ব করতেন সেটি তালাবদ্ধ। অফিসে পুলিশের সিলগালা করা তালাও ঝুলছিল। ট্রাক স্ট্যান্ডের অন্য কর্মকাণ্ড ঠিকই আছে। এখান থেকে অতি গোপনে নূর হোসেন চেয়ারম্যানের নামে চাঁদা উঠছে বলে ট্রাক চালকরা অভিযোগ করছেন। ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন সেতু ঘেঁষা বালু মহাল। এই বালুমহালকে কেন্দ্র করেই হোসেন চেয়ারম্যান রাতারাতি ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ বনে যান বলে এলাকায় প্রচার আছে। তবে বালুমহালের দৃশ্যপট এখন পুরোটাই পাল্টে গেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) একাংশে ঘাট পরিচালনা করলেও বাকি সব জায়গায় বালু ফেলে গাছ লাগানো হয়েছে।
কদমতলি নতুন মহল্লা, সানাড়পাড়, সিআইখোলা, সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়াপদা কলোনি নিয়ন্ত্রণ করতেন নূর হোসেন। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের ১, ২, ৩, ৪ নম্বর ওয়ার্ড ও আশপাশের এলাকা ছিল নূর হোসেনের চাঁদা আদায়ের সাম্রাজ্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেকেই জানান, নূর হোসেনের লোকেরা চাঁদার টাকা তার স্ত্রী রুমার কাছে নিয়ে যায়। চিটাগাং রোড থেকে ৪, ৩ ও ১ নং ওয়ার্ডে চাঁদা আদায় করছে নূর হোসেনের ভাগিনা ও এক সহযোগী। মোগড়াপাড়া থেকে চিটাগাং রোডে লেগুনার লাইন থেকে প্রায় ৫০০ টাকা তোলেন তার এক ভাতিজা। আর ১ নং ওয়ার্ডে রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করছে ৭ খুনের এজাহারভুক্ত আসামি আমিনুল হক রাজু। প্রতিমাসে ১ হাজার ৩০০ টাকা করে গাড়িপ্রতি আদায় করে। সিদ্ধিরগঞ্জ ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও হোসেন চেয়ারম্যানের ভাতিজা। আন্তঃজেলা ট্রাক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে নূর হোসেনের অন্যতম এক সহযোগী। তিনি প্রতিটি ট্রাক থেকে চাঁদার টাকা আদায় করে গোপনে নূর হোসেনের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেন। নূর হোসেনের লোকেরা এই এলাকায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গুদাম থেকে জোর করে গম বের করে বেশি দামে অন্য জায়গায় বিক্রি করেন। এ থেকে প্রাপ্ত টাকা নূর হোসেনের স্ত্রীর কাছে চলে যায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন বলেন, ‘নূর হোসেনের মতো অপরাধী আর কোনো সময় মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। তার বিচার শুরু হয়েছে। যারা তার অনুসারী, তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তারপরও যদি তারা চাঁদাবাজি করে বা তাদেরকে কেউ চাঁদা দেয়, তাহলে কী আর করা। কিন্তু কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিচারাধীন বিষয় নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য না করাই শ্রেয়।’
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment