Wednesday, March 9, 2016
ডেটিংয়ের সুযোগ না দেয়ায় ভাইঝি খুন
ভাইঝি হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছে মাসুক মিয়া। প্রেমিকাকে নিয়ে ডেটিং করার সুযোগ না দেয়ার ক্ষোভে এই হত্যা ঘটনা ঘটিয়েছে সে। জেলার পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে গতকাল হত্যা বিবরণ দেয় মাসুক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় অপহরণের ২দিন পর সোমবার এক শিশুর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পৌর এলাকার একটি বাড়ি থেকে খাদিজা মনি ওরফে মিতু (৭) নামের ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। মিতু স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়তো। এ হত্যা ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে- কসবা পৌর এলাকার শীতল পাড়া মাদ্রাসার সামনে থেকে গত ৫ই মার্চ সকাল পৌনে ৮ টার দিকে অপহৃত হয় মিতু। এ ব্যাপারে মা রুনা আক্তার বাদী হয়ে পরদিন কসবা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপরই পুলিশ কসবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মাসুক মিয়া নামে মিতুর এক চাচাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার আদালতে তাদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মিতুকে অপহরণের পর মাসুক মিয়া ফোনে আড়াইলাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এই ফোনের সূত্রেই গ্রেপ্তার করা হয় ৩ জনকে। পুলিশের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে সোমবার বিকালে মাসুক হত্যার কথা স্বীকার করে এবং লাশ কোথায় রেখেছে তা পুলিশকে জানায়। এরপর পুলিশ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কসবার বাবলু মিয়ার পাঁচতলা বাড়ির ফলস ছাদ থেকে মিতুর লাশ উদ্ধার করা হয়। মাসুক কসবার লতুয়ামুড়া গ্রামের সমরাজ মিয়ার ছেলে। মিতুর বাবা প্রবাসী আল আমীন তার আপন মামাতো ভাই। মিতু অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মজিবুর রহমান জানান মাসুক একাই মিতুকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে। অপহরণ করার অল্প সময়ে মধ্যেই সে তাকে হত্যা করে। এরপর মুক্তিপণ হিসেবে আড়াই লাখ টাকা চেয়ে ফোন করে। এই ফোনের সূত্রেই আমরা ৩ জনকে আটক করি। মাসুক মিয়াকে গতকাল পুলিশ সুপার এর কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান পিপিএম এবং অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা মাসুকের কাছ থেকে হত্যা বিবরণ শোনেন। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়- মাসুক তাদেরকে বলেছে সে একদিন তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে মামাতো ভাই আল আমিনের কসবা সদরের ভাড়া বাসায় যায়। ঐদিন সে ঘণ্টাখানেক সময় কাটায় গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে সেখানে। এর ৩/৪ দিন পর মাসুক তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আবার ঐ বাসায় যায়। তখন আল আমিনের স্ত্রী তাকে বাসায় আসতে বারণ করে। বলে তোমার ভাই এই কথা শুনলে আমাকে তালাক দেবে। তখন মাসুকের গার্লফ্রেন্ড তাকে বলে এটা তোমার কেমন ভাবী তোমাকে বাসায় ঢুকতে দিলো না। তখন মাসুক বলে আমি এটা দেখাবো বলে চলে যায়। পরিকল্পনামতো ৪ঠা মার্চ একটি বাসা ভাড়া নিতে আসে সে। বাসা দেখে সে পরে জানাবে বলে চলে আসে। এরপর দু’টি ছোরা কিনে। পরদিন সে বাড়ি থেকে ৬ টায় বের হয়ে মিতু যে স্কুলে পড়ে সেখানে আসে। মিতুর আসতে বিলম্ব দেখে সাড়ে ৭টার দিকে বাসার কাছে গিয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকে। পৌনে ৮টার দিকে মিতু বাসা থেকে বের হলে তাকে ডেকে নেয়। মজা কিনে দেবে বলে কাছে টেনে নেয়। এরপর বলে আমি বাসা নিয়েছি, চলো তোমারে বাসা দেখাব। এরপর ভাড়ার জন্যে দেখে আসা ঐ বাসায় নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে গলাটিপে ধরে। এতে মিতু অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন মরে গেছে ভেবে গলা থেকে সে হাত সরিয়ে নেয়। এরপর হঠাৎ দেখে মিতুর শরীর কাঁপছে। তখন বের হয়ে নিচে রেখে আসা ছোরা দু’টি ওপরে নিয়ে আসে এবং মিতুকে বাথরুমে নিয়ে জবাই করে। এরপর বের হয়ে সে একটি সিম কিনে মুক্তিপণ দাবি করে। মিতু কসবা সদরের ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১ম শ্রেণীর ছাত্রী। তার গ্রামের বাড়ি কসবা থানার গোপীনাথপুর ইউপি’র বাড়াই গ্রামে। কসবা শীতলপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকে তারা । এ হত্যা ঘটনায় জড়িত চাচা মাসুক মিয়া (১৮) ছাড়াও কিবরিয়া সরকার (১৮) ও খায়রুল ইসলাম (১৮)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment