সৈকতকে বার বার তাড়া দিচ্ছিলেন তামিম ইকবাল, 'তাড়াতাড়ি বল কর, ২০ ওভার কমপ্লিট করতে হবে আগে।' আর কুড়ি নম্বর ওভারটি শেষ হতেই জয়ের উল্লাসটা শুরু করে দেন আবাহনীর দুই জুনিয়র সৈকত এবং শান্ত। প্রতিপক্ষ কে সেটা নিয়ে আবাহনীর ক্রিকেটারদের যেন চিন্তাই নেই!
আবাহনীর মাথায় কেবল একটাই ভাবনা ছিল, মাথার ওপর আনাঘোনা করতে থাকা মেঘ বৃষ্টি হয়ে নামার আগেই ম্যাচটা ফয়সালার জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। ফলাফল তো নিশ্চিত হয়ে গেছে অনেক আগেই! লিটন-কার্তিকের সেঞ্চুরিতে গড়া রানে পাহাড় টপকানো তো চাট্টিখানি কথা নয়। মোহামেডান পারেওনি। নূ্যনতম লড়াইটা পর্যন্ত করতে পারেনি। বরং নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লজ্জাকে সঙ্গী করে মাঠ ছেড়েছেন মুশফিক-নাঈমরা।
লিটনের চোখ জুড়ানো ১৩৯ এবং দীনেশ কার্তিকের ১০৯ রানের সঙ্গে সাকিবের মারমুখী হাফ সেঞ্চুরিতে আবাহনী স্কোর বোর্ডে ৩৭১ রান তুলে। লিস্ট 'এ' মর্যাদা পাওয়ার পর বাংলাদেশের কোনো ক্লাবের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এত বিশাল রানের বোঝা নিয়ে ব্যাট করতে নেমে মোহামেডানের ব্যাটিং লাইন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। সাকিবের ঘূর্ণিতে মাত্র ১১১ রানে অলআউট মোহামেডান। ২৬০ রানের এই জয়ও ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়টা ছিল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের। গত লীগে ওল্ড ডিওএইচএসকে ২৪৭ রানে হারিয়েছিল তারা। এতদিন ওই রূপগঞ্জের ৩৫৭ রান ছিল সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
বিকেএসপিতে গতকাল সকাল থেকেই চলছিল রোদ-মেঘের খেলা। সে কারণেই কিনা টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নামে মোহামেডান। অবশ্য টস করতে মুশফিকের জায়গায় নাঈম ইসলামকে মাঠে নামতে দেখেই কিছুটা সন্দেহ হয়েছিল। মোহামেডানে কি দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে? ক্লাব কর্তারা কি মুশফিকের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না? মোহামেডানের এক কর্মকর্তা অবশ্য এসব শঙ্কা দূর করলেন, চাপমুক্ত হয়ে খেলার জন্যই মুশফিক নিজ থেকে অধিনায়কত্ব না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্য কোনো বিষয় নেই। তবে দলের দুই মূল বোলার নাঈম জুনিয়র এবং শুভাশীষ রায়কে ছাড়া মোহামেডানের বোলিং কতটা কী করতে পারবে সেটা নিয়েও একটা শঙ্কা ছিল। এর পরও প্রথম ১০ ওভার আবাহনীকে ভালোই চাপে রেখেছিলেন তারা। ৪৯ রানে ফয়সাল হোসেন ডিকেন্সের দুর্দান্ত ক্যাচ হয়ে তামিম ফেরার পর দ্রুত আউট হয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্তও। নিজের আউটটি নিয়ে অবশ্য শান্ত সন্তুষ্ট হতে পারেননি। কিছুটা গজরাতে গজরাতে মাঠ ছাড়েন তিনি। এরপরই উইকেটে যান পরশু রাতে ঢাকায় নামা দীনেশ কার্তিক। লিটন এবং ভারতীয় এ ব্যাটসম্যান কিছুক্ষণের মধ্যেই ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে নিয়ে নেন।
দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন লিটন। একটিও বাজে শট নেই, বলা যায় পুরোপুরি নিশ্ছিদ্র ইনিংস খেলেছেন এ তরুণ। দীনেশ কার্তিককে তার কাছে ম্লানই লাগছিল। ডিকেন্সকে মিড উইকেট দিয়ে চার মেরে ১০২ বলে এবারের লীগে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। আরিফুলকে হাঁটু গেড়ে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হওয়ার আগে ১৮টি চার ও একটি ছয়ে ১২৫ বলে খেলা ১৩৯ রানের ঝকঝকে ইনিংসটির সমাপ্তি ঘটে। তার আউটের পরই হাত খোলেন দীনেশ কার্তিক। হাফ সেঞ্চুরি করতে ৬৬ বল লাগালেও পরের ৫০ করেছেন মাত্র ২৩ বলে। আর সাকিবও কম যাননি। ২৪ বলে ৫৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
যে উইকেটে আবাহনীর ব্যাটসম্যানরা ঝড় তোলেন, সেখানে কি-না মুশফিক-থিসারা পেরেরারা দাঁড়াতেই পারেননি। মাত্র ৮ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় তারা। এরপর কেবল মুশফিক-নাঈমরা উইকেটে আসা-যাওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন!
রূপগঞ্জকে জেতালেন নেগি
ভিক্টোরিয়ার ২৫৮ রানের জবাব দিতে নেমে মাত্র ৮৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসেছিল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। সেখান থেকে জয়ের স্বপ্ন দেখাটা রূপগঞ্জের জন্য একটু কঠিনই। তবে সে কঠিন স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন পবন নেগি। তার দুরন্ত সেঞ্চুরিতে এ ম্যাচ ২ উইকেটে জিতে নিয়েছে রূপগঞ্জ। এ জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছেন তারা। মিরপুরে বৃষ্টিবিঘি্নত ম্যাচে প্রাইম দোলেশ্বরকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। পেসার রুবেল হোসেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১০০ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে প্রাইম দোলেশ্বর। তখন খেলা হয়েছে ৩৩ ওভার। এর পরই নামে বৃষ্টি। সাড়ে তিন ঘণ্টা বিরতির পর আবার বিকেল ৩টায় শুরু হয় খেলা। তখন ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে প্রাইম ব্যাংকের সামনে ৩৩ ওভারে ১১৮ রানের টার্গেট দেওয়া হয়। উন্মুক্ত চাঁদের ব্যাটিংয়ে ২৫ ওভারে ৪ উইকেটে ১২৫ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে তারা।


No comments:
Post a Comment