এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিন সোমবার ৯ জন শিক্ষার্থী ও তিন কেন্দ্র সচিবসহ ২১ শিক্ষক বহিষ্কৃত হয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর বলে দেয়ার সময় এক শিক্ষক হাতেনাতে ধরা পড়েন। ভ্রাম্যমাণ আদালত এ শিক্ষককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেয়। পরে জরিমানা দিয়ে রেহাই পান ওই শিক্ষক।
দেরিতে প্রশ্ন বিতরণের অভিযোগে লক্ষ্মীপুরের এলএম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে তুমুল উত্তেজনা দেখা দেয়। পরীক্ষার্থীরা জানায়, তাদেরকে ২০ মিনিট পর সৃজনশীল প্রশ্ন দেয়া হয়। কিন্তু শেষের দিকে বাড়তি সময় না দিয়ে খাতা কেড়ে নেয়া হয়। এ নিয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শিক্ষকদের ওপর চড়াও হন। এ সময় ৫ শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বিষয়টি তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। পাশাপাশি চারজন কক্ষ পরিদর্শককে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া গোপালগঞ্জে কাশিয়ানি উপজেলার রামদিয়া কেন্দ্রে এবং সদর উপজেলার বৌলতলী-সাহাপুর সম্মিলিত উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২০১৪ সালের প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ দুই ঘটনায় দুই কেন্দ্রসচিবসহ ৮ শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
প্রথম দিন এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথমপত্র, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ এবং ভোকেশনালে বাংলা ২য় পত্রের পরীক্ষা ছিল। এ বছর দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৫২৩ জন পরীক্ষার্থীর অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সারা দেশে মোট ৬ হাজার ৮২৮ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৮৪৭ জন, চট্টগ্রামে ২৭৯ জন, রাজশাহীতে ৪২৩ জন, বরিশালে ২৫০ জন, সিলেটে ২৫২ জন, দিনাজপুরে ৩০৬ জন, কুমিল্লায় ৫১০ জন, যশোরে ৪২৩ জন, কারিগরি বোর্ডে ৯৪১ জন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে দুই হাজার ৫৯৭ জন।
এবার প্রথমবারের মতো নৈর্ব্যক্তিক বা এমসিকিউ প্রশ্নের পরীক্ষা শুরুতেই নেয়া হয়। ১৯৯২ সালে এই পদ্ধতি চালুর পর থেকে গত বছর পর্যন্ত লিখিত বা সৃজনশীল প্রশ্নের পর এই পরীক্ষা নেয়া হতো।
সোমবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, কাউকে বেশি নম্বর দেয়ার নির্দেশনা নেই। কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে বেশি নম্বর দেয়ার নির্দেশ দিলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিদর্শনকালে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিকসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে শুধু শিক্ষামন্ত্রী ও সচিব পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেন।
কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে চায়। যারা এ ধরনের গুজব ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিরাও নজরদারিতে আছে। তিনি মন্তব্য করেন, বিজি প্রেস থেকে আর ‘প্রশ্ন ফাঁস হবে না’।
এমসিকিউ প্রশ্নের পরীক্ষা সৃজনশীলের আগে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত অসাধু শিক্ষকদের সুযোগ বন্ধ করতেই এমসিকিউ লিখিত পরীক্ষার আগেই নেয়া হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, আগামী বছর থেকে এমসিকিউতে আরও দশ নম্বর কমিয়ে দেয়া হবে। বর্তমানে ৪০ শতাংশ নম্বরের পরীক্ষা এমসিকিউতে হয়।
এদিকে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনসহ বিভিন্ন কারণে যশোর ও মাদ্রাসা বোর্ডে একজন করে মোট ২ জন শিক্ষক ও দুই শিক্ষার্থী এবং কারিগরি বোর্ডে ৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে যুগান্তর প্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা বোর্ডের বিভিন্ন কেন্দ্রে আরও ৬ জন শিক্ষক বহিষ্কৃত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, সরাইলের ৪ নম্বর কেন্দ্রে কর্তব্য অবহেলার দায়ে নোয়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুস সামাদ এবং কালিকচ্ছের এমএ বাশার আইডিয়াল স্কুলের সহকারী শিক্ষক আশরাফউদ্দিনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরের এলএম পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট পর সৃজনশীল পরীক্ষার প্রশ্ন বিতরণের দায়ে চন্দন, ইউনুস, মাহবুব ও পারভেজ নামে ৪ সহকারী শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। নীলফামারীর ডিমলা প্রতিনিধি জানান, পরীক্ষার হলে নিয়ম ভঙ্গ করায় ছমির উদ্দিন স্কুল ও কলেজে দাখিল ভোকেশনাল কেন্দ্রে ১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের পাঠানো তথ্যানুযায়ী মাদ্রাসা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রে এক শিক্ষক বহিষ্কৃত হয়েছেন। যুগান্তরের কুমিল্লা ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ওই শিক্ষক মুরাদনগরের বাখরনগর হাশেমিয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রের কক্ষ পরিদর্শক। তিনি পাশের কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উত্তর বলে দেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে জরিমানা দিয়ে তিনি ছাড়া পান।
এদিকে বাজিতপুর প্রতিনিধি জানান, হাফেজ আবদুর রাজ্জাক পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগে কেন্দ্র সচিব, কেন্দ্র উপসচিব, হল সুপার এবং দু’জন ইনভিজিলেটরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- হাফেজ আবদুর রাজ্জাক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম, নাজিরুল ইসলাম কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহ মো. আফজাল, হাফেজ আবদুর রাজ্জাক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো: কামরুজ্জামান, একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আবদুল আজিজ ও মহিউদ্দিন আহমদ। এ সময় রাজ্জাকুন্নেসা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের হাফিজা আক্তার নামে একজন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment