Saturday, March 12, 2016
দ. সুদানে ধর্ষণের বিনিময়ে সেনাদের বেতন!
চোখের সামনে স্বামীকে হত্যা করল সেনারা। তারপরই ১৫ বছর বয়সী কিশোরীর ওপর হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল ১০ জন। এ দুটো লাইন একটা নির্দিষ্ট ঘটনাকে উপস্থাপন করলেও এ চিত্রনাট্য এখন নিত্যদিনের ঘটনা দক্ষিণ সুদানে। এক সময় প্রাচীন রোমে সেনাদের বেতন হিসেবে লবণ দেয়া হতো। মাঝখানে কেটে গেছে বহুদিন বহুবছর। এখন অবশ্য সেনাদের বেতন নগদ অর্থেই মেটায় সরকারগুলো। কিন্তু দক্ষিণ সুদানে এবার সেনাদের বেতন দেয়া হচ্ছে ধর্ষণের বিনিময়ে। এমন অস্বাভাবিক ও গা শিউরে ওঠা বীভৎসতায় স্তম্ভিত পুরো বিশ্ব। খবর বিবিসির। জাতিসংঘ বলছে, দেশটির সরকার তার সেনা ও মিলিশিয়াদের জন্য বেতন হিসেবে ধর্ষণকে বৈধতা দিয়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করেছে বিশ্বসংস্থাটি। এতে জানানো হয়, ২০১৫ সালে শুধু দেশটির তেলসমৃদ্ধ ইউনিটি রাজ্যেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার তিনশ’ নারী। দেশটির এমন পরিস্থিতিকে বিশ্বমানবতার ‘সবচেয়ে ভয়ংকর চেহারা’ বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দূত জেইদ রা’আদ আল আল হুসেইন। এক নারী প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর স্বামীকে হত্যার পর তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা দশেক সেনা। পাষণ্ডের মতো তাকে গণধর্ষণ করে তারা। জাতিসংঘ বলছে, দক্ষিণ সুদানে সেনাদের জন্য অপহরণ, ধর্ষণ-গণধর্ষণ, হত্যা-গণহত্যার বৈধতা দিয়ে রেখেছে দেশটির সরকার। বলা হয়েছে, আমাদের মূল্যায়নকারী দল তথ্য পেয়েছে, দক্ষিণ সুদানিজ আর্মির (এসপিএলএ) সঙ্গে কাজ করা দেশটির সশস্ত্র মিলিশিয়াদের সঙ্গে সরকারের ‘যে কোনো কিছু করার ও যে কোনো কিছু ছিনিয়ে নেয়ার’ চুক্তি রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, এ চুক্তির পর দেশটির সেনারা বিভিন্ন বাড়িতে হানা দিয়ে সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া, ধর্ষণ এবং নারী ও কিশোরীদের অপহরণ শুরু করে। এগুলোই তাদের বেতন বলে ধরা হয়। অপর এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও দক্ষিণ সুদানের সেনাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাটির দাবি, এ অভিযোগের পক্ষে তাদের কাছে প্রমাণও রয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর মাসে ৬০ জনেরও বেশি নিরস্ত্র মানুষকে শিপিং কন্টেইনারে পুরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে সেনারা। হত্যার পর তাদের দেহগুলো ইউনিটি রাজ্যের লির শহরের একটি মাঠে পুঁতে ফেলা হয়েছে। অ্যামনেস্টির লামা ফাইখ বলেন, দেশটির সরকারি বাহিনীর সদস্যরা শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। নির্যাতন করে ধীরে ধীরে তাদের বিভীষিকাময় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, ঘটনা জানতে তারা ৪২ জনেরও বেশি প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এর মধ্যে ২৩ জন দাবি করেছেন, তারা সরাসরি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে দেখেছেন। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কিশোরও ছিল। ২০১১ সালে সুদানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর দক্ষিণ সুদান ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করে।
Labels:
আন্তর্জাতিক
Subscribe to:
Post Comments (Atom)


No comments:
Post a Comment