Social Icons

Monday, September 4, 2017

কমছে প্রবাসী আয়, উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা


বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। কিন্তু বেশ কিছু সময় ধরেই এই রেমিটেন্সের হার নিম্নমুখী। রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে প্রবাসী আয় কমেছে ১৪ শতাংশ। গত ৬ বছরে এটিই সর্বনিম্ন, যা উদ্বিগ্ন করছে সরকার, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এদিকে চলতি অর্থবছরে রেমিটেন্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় এই আশঙ্কা করছে আইএমএফ।
 সম্প্রতি প্রবাসী আয় কমার পেছনে ৫টি কারণ দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের সঙ্গে বেশকিছু দেশের স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জ্বালানি তেলের দরপতন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিদেশে স্থায়ী হওয়া, সৌদি আরবে আকামা (বসবাসকারী পরিচয়) সংক্রান্ত খরচ এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অপব্যবহারের কারণেই প্রবাসী আয় কমছে। এক সময় প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তবে এখন তাদের অনেকেই সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছেন। ব্যবসা করতে গিয়ে তারা সেখানে বিনিয়োগ করছেন। কোনো কোনো দেশে নিয়মের আওতায় সেদেশের নাগরিকদের ব্যবসায় অংশীদার হিসেবে রাখতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদেরকে একটু ছাড় দিতেও হচ্ছে। এসব ব্যবসায়ীরা পরিবার নিয়ে ওই দেশগুলোতে স্থায়ী বসবাস করছেন। ফলে দেশে অর্থ পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা হারাচ্ছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার ধাক্কাও আছে প্রবাসী আয়ে। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম কমায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কমে এসেছে। ফলে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে এবং কোথাও কোথাও নতুন নিয়োগও বন্ধ রয়েছে।
আবার মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের অপব্যবহারের কারণে অবৈধ পথে দেশে টাকা আসছে। বেশ কয়েকটি দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নামে ভুয়া এজেন্ট সেজে এদেশের এক ধরনের অসাধু এজেন্টের কাছে তথ্য দিয়ে ক্যাশ ইন করে টাকা পাঠানো হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা দেশে অর্থ পাঠালেও তা রেমিট্যান্স হিসেবে যোগ হচ্ছে না বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের প্রধান উৎস মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশ থেকেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা কমেছে। জ্বালানি তেলের অব্যাহত দরপতন এবং খোলাবাজারে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বেশি হওয়ার কারণে গত ছয় বছরের মধ্যে এবারই দেশে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) নিয়ে এমন মতামত তুলে ধরেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।
প্রবাসী আয়ের বিষয়ে এমসিসিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক বিনিময় হারের তুলনায় খোলাবাজারে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্য বেশি। এ কারণে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স পাঠানো নিরুৎসাহিত হচ্ছে। গত অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় প্রবাসী আয় আসা কমেছে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। পর্যালোচনায় প্রবাসী আয় বাড়াতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া উদ্যোগগুলো উল্লেখ করে বলা হয়, নানা উদ্যোগের পরও শেষ দিকে এসে কিছুটা বাড়লেও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক নয়। নানা অনিশ্চয়তার কারণে এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসা কমেছে ৩০ শতাংশ। একই সময়ে বৈধ পথে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ যুক্তরাজ্য থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ, মালয়েশিয়া থেকে সাড়ে ১৭ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুর থেকে সাড়ে ২২ শতাংশ কমেছে। বৈধ পথে অর্থ পাঠালে তার বিনিময় মূল্য কম হওয়ায় অনানুষ্ঠানিক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে এসব দেশ থেকে বেশি অর্থ এসেছে। তবে এই কমে যাওয়া রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত জুনে রেমিটেন্স সেবার মান বাড়াতে দেশের ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ৫টি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো- প্রতিটি শাখায় রেমিটেন্স হেল্প ডেস্ক চালু করা; প্রবাসী আয়ের বেনিফিসিয়ারিকে (উপকারভোগী) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য প্রদান নিশ্চিত করা; গ্রাহক হয়রানি রোধে প্রতিটি শাখায় প্রবাসী বা প্রবাস আয়ের সুবিধাভোগীদের জন্য আলাদা খাতায় ক্রমানুসারে অভিযোগ গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা; পাক্ষিক ভিত্তিতে অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগকে জানানো এবং প্রবাসীদের জন্য ব্যাংকের নিজস্ব ও সরকারের সব ধরনের বিনিয়োগ সেবার প্রচার করা ও বৈধ পথে রেমিট্যান্স নেওয়ার সুবিধা প্রচার করা।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘রেমিটেন্স বাড়াতে আমরা বেশ কিছুদিন ধরে নানা উদ্যোগ নিয়ে আসছি। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অপব্যবহার রোধে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রোভাইডারকে দিয়ে এই বিষয়ে সতর্ক হতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। আমাদের দূতাবাসকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি। বিদেশি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিয়ে অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates