Social Icons

Tuesday, February 2, 2016

ইসলামে স্ত্রী হিসেবে নারীর মূল্যায়ন

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাকের জন্য। দুরুদ ও সালাম জানাই মানবতার মুক্তির দিশারী, সর্ব কালের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক এবং নারী জাতির মুক্তির ত্রাণ কর্তা হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উপর যিনি পৃথিবীকে ঘোর অমানিশা থেকে মুক্ত করে হিদয়াতী নূরের আলোতে উজ্জ্বল করে উসওয়াতুন হাসানার মাধ্যমে বঞ্চিত, নিপীড়িত এবং চরমভাবে নির্যাতিত মানবতার মুক্তি সাধন করে জগতে সত্যিকার মানবতা কায়েম করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। নারী জাতি সর্ম্পকে বিশ্ব নবী (সা.)-এর অমিয় শাশ্বতবাণী “নারী জাতি সমাজেরই একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ”। নারীরা সৃষ্টি জগতের জন্য মহান আল্লাহপাকের এক অনুপম এবং অতুলনীয় সৃষ্টি। আল্লাহর সৃষ্টিতে নর এবং নারী একে অন্যের পরিপূরক। ইসলামের দৃষ্টিতে নর এবং নারীর স্থায়িত্ব এবং শান্তি তাদের পারস্পারিক সহযোগিতা এবং সৌহাদ্যপূর্ণ সর্ম্পকের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। একটি সফল বিয়ের মাধ্যমেই একজন নারী স্ত্রী হিসেবে স্বামীর গৃহে আগমন করে স্বামীর মনোরাজ্যে স্থাপন করে স্বীয় সিংহাসন এবং বিচরণ করে তার আপন রাজত্বে। কেননা নারীরা মৃত মনে নব জীবনের স্পন্দন জাগায় সতত সর্বত্র। দুঃখ ভারাক্রান্ত মানসে জাগায় আশার আলো। বিপদে প্রচ- ঝঞ্ঝা বাত্যায় বৃক্ষের কচি শাখার মতই থাকে সে অটুট, স্থায়ী। সামান্য আনন্দেই নারীর বদনে খেলে হাসির উদ্বেল লহরী। নারীরা স্বামীর জীবনের আবাহন, পুলকের সঙ্গিত, পবিত্র হ, মমতার প্রতীক প্রতিমূর্তি। তারা সবিশ্ব নিখিলের প্রাণ সম্পদ। বিশ্ব নিখিলের ছবিতে যা কিছু চাকচিক্য তা সবই এ নারীর কল্যাণেই। গোটা বিশ্ব মানবতাই নারীর কাছে ঋণী। সৃষ্টি জগতের যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যাণকর সেখানেই নারীরা আছে আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে। বন্ধুত্ব, প্রেম প্রীতি, পবিত্রতা, সতিত্ব আত্মদান হচ্ছে এ নারীর ভূষণ বৈশিষ্ট্য। অনন্ত কাল পর্যন্ত নারীর এ ভূষণ স্থায়ী থাকবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় পৃথিবীতে এ নারী সমাজ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সমাজের সর্বক্ষেত্রে চরমভাবে অবহেলিত, নির্যাতিত হয়ে জগতে মানবেতর জীবন- যাপন করে আসছে। পৃথিবীতে প্রচলিত অন্যান্য ধর্মে যারা বর্তমানে নিজেদেরকে সভ্যদার দাবিদার বলে জাহির করে তারা নারীদেরকে সকল পাপ কর্মের প্রধান উৎস বলে মনে করে। নারীরা জীবনের সর্বত্রই অবহেলার এবং ঘৃণার পাত্রী হিসেবে স্বীকৃৃত ছিল। দাসী এবং স্ত্রীদের মধ্যে সামাজিকতার কোন পার্থক্য ছিল না। তারা ছিল একে অন্যের পরিপূরক। স্ত্রী’রা নগন্য জীব এবং দয়ার পাত্রী হিসেবে সমাজে পরিচিত ছিল। বৈবাহিক জীবনে স্ত্রী’রা ছিল চরমভাবে উপেক্ষিত, অবহেলিত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত। জাহিলিয়া যুগে একজন পুরুষ একসাথে অনেক নারীর সাথে দৈহিক মিলনে আবদ্ধ হতে পারত। পুরুষরা তাদের ইচ্ছানুসারে স্ত্রী গ্রহণ এবং বর্জন করতে পারত। এ ক্ষেত্রে তাদের জন্য কোন বাধা ধরা নিয়ম ছিল না। সামাজিক মূল্যবোধ, সম্মানবোধ বলতে স্ত্রীদের কিছুই ছিল না। প্রতিবাদ করার কোন ভাষাও তাদের ছিল না। সন্তান উৎপাদন এবং ভোগের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার হওয়াই ছিল তাদের প্রধান কাজ। পিতা মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে সৎ মায়ের বৈধ উত্তরাধিকারী হওয়ার ন্যায় নেক্কার জনক রীতিনীতি আরবে বিদ্যমান ছিল। তাছাড়া অর্থনৈতিক ভাবে স্ত্রীরা ছিল শোষিত, বঞ্চিত। তাদের মীরাসে কোন প্রকার অধিকার ছিল না। বরং তারা নিজেরাই মীরাসের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হত। স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে পরিত্যক্ত মাল, সম্পদের ন্যায় উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হত। তাদেরকে পরিবারের নিকট আটকে রেখে স্বামীরা তাদের নিকট থেকে তাদের ধন সম্পদ ছিনিয়ে নেবার নানাহ চেষ্টা এবং বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বন করত। মানবতার ধর্ম ইসলাম স্ত্রী জাতির এ চরম অবমাননাকর, ঘৃনীত রীতি চিরতরে বন্ধ করে তাদেরকে মীরাসের অংশীদার নির্ধারণ করে দেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের সূরা নিসায় এরশাদ করেন “তোমরা হে স্বামীরা! তাদের (স্ত্রী) দের বেঁধে আটকে রাখবে না এ উদ্দেশ্যে যে, তাদের নিকট থেকে তোমাদের দেয়া ধন সম্পত্তির কিছু অংশ কেড়ে নেবে”। ইসলাম নারীদেরকে স্ত্রী হিসেবে যে সম্মান এবং মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছে তা পৃথিবীর প্রচলিত অন্যান্য ধর্মে সত্যিই বিরল। স্ত্রীদের মর্যাদা প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) তার ঐতিহাসিক বিদায় হজে¦র ভাষণে উল্লেখ করেন “নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, তাহাদিগকে তোমরা আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ”। তাছাড়া স্ত্রীকে জগতের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে আখ্যায়িত করে নবীজি (সা.) এরশাদ করেন “সমগ্র বিশ^জগতই অস্থায়ী ভোগ্য সম্পদ, আর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হল নেককার স্ত্রী”। তাছাড়া স্ত্রী’দের প্রশংসায় পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় আরো বলা হয়েছে “স্ত্রীরা হল পুরুষদের পোশাক, আর তোমরা পুরুষরা হচ্ছ মেয়েদের পরিচ্ছদ”। কেননা এ জগতে স্ত্রী’রা হল পুরুষদের জন্য শান্তি স্বরুপ। স্বামীদের জন্য প্রেম ভালবাসার পবিত্র এবং নিখুঁত আশ্রয়স্থল হল তার স্ত্রী। বিশে^র বহু সভ্যজাতি আজও আছে যারা স্ত্রী জাতিকে আল্লাহ প্রদত্ত তাদের মোহরানা প্রদান করে না এমনকি তা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করার জন্য নানাহ যড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম স্ত্রী জাতির এ অধিকার সু প্রতিষ্ঠিত করে তাদের স্বাধীন মালিকানা স্বত্ব প্রদান করার নির্দেশ প্রদান করে আর্থিক ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা আরো সুদৃঢ় করার শুভ প্রয়াসে স্বামীর উপর তার বিবাহিত স্ত্রীর মোহরানা প্রদান অত্যাবশ্যকীয় করে স্ত্রী জাতির আর্থিক অবস্থাকে আরও সমুন্নত করেছে। কেননা স্বামীর উপর তার স্ত্রীর মোহরানা প্রদান আল্লাহপাক প্রদত্ত এক ঐশী নির্দেশ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে সূরা নিসায় উল্লেখ আছে “আর তোমরা তাদের (স্ত্রী) মোহরানা সন্তুষ্টচিত্তে প্রদান কর”। তাছাড়া ইসলাম মৃত ব্যক্তির সম্পতিতেও স্ত্রীর অর্থনেতিক অধিকার সুনিশ্চিত করছে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে প্রথমেই তার স্ত্রীর বকেয়া মোহরানা আদায় কর হয়। যদি মোহরানা বকেয়া থাকে। আর বাকি সম্পত্তি উত্তরাধিকারীগণের মধ্যে বণ্টন করা হয় তাতেও স্ত্রীর একটা অংশ নির্ধারিত থাকে। কেননা মোহরানা প্রদান স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর জন্য করুনা ভিক্ষা বা ব্যক্তিগত বা সামাজিক আভিজাত্যের কোন ট্র্যাডিশন নয় বরং তা হল আল্লাহর পক্ষ থেকে স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার, তার পাওনা। এ নিয়ে গড়িমসি কিংবা অবহেলার কোন সুযোগ নেই। স্ত্রীর মোহরানা আদায় না করার ভয়াবহ পরিণতি সর্ম্পকে মুসনাদে আহমাদে নবীজি (সা.) এরশাদ করেন “যে ব্যক্তি কোন মেয়েকে মোহরানা দেবার ওয়াদা দিয়ে বিয়ে করে কিন্তু মোহরানা আদায়ে ইচ্ছে নেই সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে একজন অপরাধী হিসেবে দাঁড়াবে”। একই প্রসঙ্গে হাদিসে আরও উল্লেখ আছে “পাঁচ ব্যক্তির উপর আল্লাহর ক্রোধ অবর্তিত হবে তাদের মধ্যে একজন হল যে, স্ত্রীকে ম্ােহরানা থেকে বঞ্চিত করে এবং তার উপর অত্যাচার করে”। ইসলাম দাম্পত্য জীবনেও স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর উপর অত্যাচার, নির্যাতন করে তাদের জীবন অতিষ্ট এবং দাম্পত্য জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় এরশাদ করেন “তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের নানাহভাবে কষ্টদান এবং উৎপীড়নের উদ্দেশ্যে আটক করে রেখো না, যে লোক এরূপ করে সে নিজের উপরই জুলুম করে। আর তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে খেলনার বস্তুতে পরিণত কর না”। একই প্রসঙ্গে নবীজি (সা.) আবু দাউদ শরীফে এরশাদ করেন “আল্লাহর দাসীদের তোমরা মারধোর করনা”। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, স্ত্রীদেরকে স্বামীর দাসী বলা হয় নাই বরং আল্লাহর দাসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে দাসী ভাবার কোন অবকাশ ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলাম স্ত্রীদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন এবং তাদের প্রতি অশালীন আচরণ করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। তাছাড়া স্বামীদেরকে স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দেয়া হয়েছে স্ত্রীদেরকে সর্বদা অকৃত্রিম ভালবাসা, আদর, সোহাগ এবং মায়ামমতার পরশে বেঁধে জীবন চলার পথে এগিয়ে যেতে।

No comments:

Post a Comment

 

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

সম্পাদকীয় কার্যলয়

Rua padre germano mayar, cristo rio -80040-170 Curitiba, Brazil. Contact: +55 41 30583822 email: worldnewsbbr@gmail.com Website: http://worldnewsbbr.blogspot.com.br

সম্পাদক ও প্রকাশক

Jahangir Alom
Email- worldnewsbb2@gmail.com
worldnewsbbbrazil@gmail.com
 
Blogger Templates