চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মে মেয়াদে (প্রথম ১১ মাসে) জার্মানিতে ৫০৪ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ৪০ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে জানানো হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জার্মানিতে মোট ৪৯৮ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ওই বছরের জুলাই-মে মেয়াদে জার্মানিতে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের আয় হয়েছিল ৪৪৪ কোটি মার্কিন ডলার।
সম্প্রতি পাটশিল্পের সম্ভাবনা আরো বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ঢাকায় ফ্রান্স ও জার্মান দূতাবাস যৌথভাবে একটি প্রকল্প উপস্থাপন করেছে। ফ্রাংকো-জার্মান ওই প্রকল্পের নাম ছিল ‘পাট ও সমন্বিত ঐতিহ্য এবং আবিষ্কার’। প্রকল্প উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও পাটশিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর তাগিদ দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে পাটপণ্য বাংলাদেশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। ওই অনুষ্ঠানে ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূত ডক্টর থমাস প্রিঞ্জ বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের আরো বৈচিত্র্য দরকার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ দেশে সত্তর ও আশির দশকে পাটের ব্যবহার কমেছে। আধুনিক গাড়ি নির্মাতারা এখন পাটের আঁশ ব্যবহার করেন। তাই ইউরোপেও পাটের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশের চেষ্টা চালানো উচিত।
জার্মান প্রবাসী এস. এম লুৎফর পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি ২৭ বছর ধরে জার্মানে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। প্রবাসী এই ব্যবসায়ী জানান, জার্মানে বাংলাদেশের রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। লুৎফর বলেন, অনেক সময় জার্মানের কোন দোকান থেকে দামি পোশাকটি কেনার পর যখন মেইড ইন বাংলাদেশ দেখি তখন গর্ব হয়। আমাদের কাপড়ের মান উন্নত বিশ্বের কাছে যথেষ্ট সমাদৃত। আর এই গুনাগুন ঠিক রেখে জার্মানিতে গার্মেন্টস শিল্পের আরও সম্প্রসারিত রপ্তানি বাজার গড়ে তোলা সম্ভব। এই প্রবাসী ব্যবসায়ী জানান, বাংলাদেশের চিংড়ি স্থানীয় জার্মানদের কাছে পছন্দের একটি খাবার। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়াজাতকরনের অভাবে সেগুলো বিশ্ব বাজারে গিয়ে নিজস্ব মান ধরে রাখতে পারে না। ফলে সুনাম নষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের। এসব দিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে চিংড়ি রপ্তানি থেকেও লাখ লাখ ডলার আয় সম্ভব বলে মনে করেন এ প্রবাসী ব্যবসায়ী।
জনপ্রিয় ও রপ্তানি বাণিজ্যের প্রথম সারিতে থাকা এই দুটি পণ্যের পাশাপাশি লুৎফর জানান, জার্মানিতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদাও তুলনামূলক বেশি। এছাড়া গৃহস্থলী সাজানোর বিভিন্ন হস্তশিল্প ও কুটির শিল্পের পণ্যেরও চাহিদাও রয়েছে জার্মানে। তিনি জানান, সব জাতির মানুষই ঘর সাজাতে পছন্দ করে। এ ক্ষেত্রে জার্মানরাও ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ থেকে ক্ষুদ্র পরিসরে লাগেজ কিংবা অন্যান্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেসব গৃহসজ্জার জিনিস পত্র সেখানে যায়। সেগুলো স্থানীয় বাজারে খুব সহজেই ক্রেতা আকর্ষণ করে। যা লাভজনক দামে বিক্রি হয় জর্মানিতে। লুৎফর মনে করেন, গার্মেন্টস, চিংড়ি, পাটজাত পণ্য অথবা অন্যান্য পণ্যের মত যদি হস্ত ও কুটির শিল্পের বিভিন্ন গৃহসজ্জা সামগ্রী বড় পরিসরে রপ্তানি করা যায় তাহলে সেটা অনেক লাভজনক হবে। আর এর মাধ্যমে নতুন নতুন রপ্তানি পণ্যের বাজার তৈরিও সম্ভব হবে।
রপ্তানি আয় দেশের অর্থনীতির চাকা কে গতিশীল রাখুক এটা প্রত্যেক নাগরিকের প্রত্যাশা। বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত রপ্তানি পণ্য যেমন আছে, তেমনি অনেক নতুন পণ্যের সম্ভাবনাও দৃষ্টি এড়িয়ে যাবার মত নয়। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সচেতন পদক্ষেপের মাধ্যমে জার্মানি এমনকি সমগ্র ইউরোপে নিজেদের বাণিজ্য প্রসারিত করা কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার। অপেক্ষা কেবল সু-দৃষ্টির।
No comments:
Post a Comment