প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি মালয়েশিয়া। আবারও অভিবাসী আটকের হিড়িক পড়েছে দেশটিতে। বাংলাদেশিসহ ফের শতাধিক অভিবাসীকে আটক করেছে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশ। গত ১২ আগস্ট মধ্য রাতে কে এল সিসি ও ভোর রাতে গুল পেরিওক জেলার মুকিম আপাম এলাকায় পাসির মাস কলোনিতে একটি কনস্ট্রাকশন সাইটে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
ভোর রাতে কনস্ট্রাকশন সাইটে অভিযানের সময় ইমিগ্রেশন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অবৈধ শ্রমিকরা গায়ে ও মুখে কাদা মেখে ফ্লোরের নিচ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বাংলাদেশি এবং ইন্দোনেশিয়ান শ্রমিকরা পালাতে ব্যর্থ হয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন প্রধান দাতুক সেরি মুস্তাফার আলী বলেন, ই-কার্ড প্রোগ্রামের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরপরই এ অভিযান শুরু হয়েছে এবং অবৈধ অভিবাসীর বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। কিন্তু গত ১৬ জুলাই প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের কারণে মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ রয়েছে।
এইদিন মন্ত্রণালয়ে এক সেমিনারে তিনি বলেন, “তাদের(মালয়েশিয়া) দেওয়া সময় অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধদের বৈধতার জন্য সময় রয়েছে। কিন্তু তারা হঠাৎ করেই অভিযান শুরু করেছে। এরপরই সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হলে, তারা অভিযান বন্ধ করে।”
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বৈধ কাগজপত্রহীন শ্রমিকদের বৈধভাবে পুনঃনিয়োগের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ই-কার্ডের আবেদন নেওয়া হয়, যার সময় শেষ হয় ৩০ জুন। ৩০ জুন ই-কার্ড দেওয়া বন্ধ হলেও রিহায়ারিং চালু থাকবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। যারা ই-কার্ড পেয়েছেন তাদের দ্রুত দূতাবাস হতে পাসপোর্ট করে রিহায়ারিং সম্পন্ন করে বৈধ হতে হবে।
বাংলাদেশ হাইকমিশন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ই-কার্ডে নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হলেও অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার অন্য কর্মসূচি ‘রিহায়ারিং’ এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। তাই বাংলাদেশিরা যাতে কোনো রকম ভয়ভীতি ছাড়াই ‘রিহায়ারিংয়ের’ সুযোগ নিতে পারেন, সে জন্য মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশের লোকজন নিবন্ধনের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছিলেন। কিন্তু আবার ধরপাকড় শুরু হওয়ায় তারা নতুন করে ভোগান্তিতে পড়েছেন’। এদিকে অভিবাসী শ্রমিক আটক বন্ধ করতে মালয়েশিয়াকে অনুরোধ জানিয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আইনপ্রণেতারা।
এ পর্যন্ত ছয় হাজারেরও বেশি বিদেশি নাগরিক আটকের ঘটনায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আইনপ্রণেতারা পরিস্থিতির কারণ অনুসন্ধানে মালয়েশিয়া সফর শেষে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সফর শেষে ফিলিপাইন কংগ্রেসউইম্যান এম্মি ডে জিসাস কুয়ালালামপুরে সাংবাদিকদের বলেছেন, এ অমানবিক কার্যক্রম অবশ্যই সমাপ্ত করা উচিত। অনেক অভিবাসীই সবসময় ভীতির মধ্যে বসবাস করছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা এদের দীর্ঘদিন আটকে রাখেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
অন্যদিকে, ই-কার্ড নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হলেও মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন অবৈধ প্রবাসীদের মাই-ইজির সুযোগ নিয়ে বৈধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর জানান, মালয়েশিয়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক বাংলাদেশের শ্রমিকদের বিষয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে অন্য দেশের পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ বিশেষভাবে নজরে রাখছে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা। তবে যারা আটক হয়েছেন তাদের দেশে ফিরে যাওয়া ছাড়া এখন আর কোনো পথ নেই। স
বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৬ হাজার ৩৮ জন অবৈধ শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। আর এসব আটককৃত বড় দুটি দলের অধিকাংশই ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের নাগরিক। এছাড়া আটককৃতদের মধ্যে মিয়ানমার, ফিলিপিন্স ও ভিয়েতনামের নাগরিকও রয়েছে।


No comments:
Post a Comment