সেনেগালের বিভিন্ন খাতে আছে কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত সুযোগ। ধীরে ধীরে এই সেনেগাল বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার হয়ে উঠতে পারে। কৃষি পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য সেনেগালের জন্য বিশেষ আগ্রহের একটি জায়গা। এ ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশিদের কৃষি অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে চায়। বাংলাদেশি কৃষিপণ্য উৎপাদনে জমি ইজারা নেওয়ার পাশাপাশি কৃষি প্রযুক্তি সরবরাহ, বিশেষজ্ঞ ও কর্মীর চাহিদা রয়েছে সেনেগালে।
পারস্পারিক সহযোগিতা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষ কর্মীদের কর্মসংস্থান হতে পারে সেনেগালে। এরইমধ্যে কৃষি, ঔষধসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল সংখ্যক জনশক্তির চাহিদা তৈরি হয়েছে দেশটিতে। তাছাড়া কারিগরি কাজে দক্ষ জনশক্তির রপ্তানিরও সম্ভাবনা আছে সেখানে।
স্থানীয়রা বলছেন, কৃষি ক্ষেত্রে সেনেগালের নিজস্ব শ্রমিক স্বল্পতা রয়েছে। তাছাড়া আফ্রিকার এই দেশে কয়েক লাখ হেক্টর জমি ইজারা নিয়ে সেখানে কৃষি পণ্য উৎপাদন ও ব্যবসা সম্প্রসারিত করা সম্ভব । একই সাথে নিজ দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে যেতে পারলে ওই দেশে কয়েক লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন সৃষ্টি হবে তেমনি রেমিটেন্সের উর্ধ্বগতি ফিরিয়ে আনাও সম্ভব হবে।
সেনেগাল প্রবাসী বাংলাদেশি মোঃ নুরুজ্জামান জানান, কৃষি ক্ষেত্রে বীজের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের বিষয়ে পানি সেচের ব্যবহার, বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি কৃষি সম্পর্কিত বিষয়ে সেনেগালের স্থানীয় অধিবাসীরা খুব একটা সচেতন নয়। অন্যদিকে, আমাদের দেশের লোকজন এ বিষয়ে যথেষ্ট পরিপক্ব অভিজ্ঞতা নিয়েই বেড়ে ওঠে। তাই তারা যদি কৃষিপ্রধান দেশের সচেতন নাগরিক হিসাবে সে দেশে নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কৃষি খামার প্রতিষ্ঠা করে তাহলে সহজেই লাভবান হতে পারবে।
মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, কৃষির মত আমাদের গার্মেন্টস সেক্টরও সেনেগালের বাজারে সম্ভাবনাময় একটি খাত। এরইমধ্যে ইউরোপ ,আমেরিকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের জন্য রপ্তানী বাণিজ্যের অন্যতম একটি লাভজনক পণ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে গার্মেন্টস। ফলে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ গার্মেন্টস কর্মী সেনেগালে নিয়ে আসার সুযোগও রয়েছে।
ঔষধ শিল্পের চীফ অব দ্যা প্যারেন্টাস এসএ হিসেবে সেনেগালে কর্মরত এই বাংলাদেশি প্রবাসী আরো বলেন, ‘প্রযুক্তি খাতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সেনেগালে। এই খাতেও দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে তাদের। আমার জানা মতে এ পর্যন্ত ২২ জনের মত বাংলাদেশি সেনেগালে আছে। এর মধ্যে ২ জন আছে কুয়েত দূতাবাসে। অন্যান্যরা বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পুরনো যন্ত্রাংশের বিশাল বাজার আছে সেনেগালে। এ খাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা উদ্যোগী হলে অনেক ভালো একটি বাজার সৃষ্টি হবে আমাদের জন্য।
এই প্রবাসী জানান, সেনেগালের উচ্চবিত্ত শ্রেণি যে গাড়ি ব্যবহার করে তা নষ্ট হলে তারা আরেকটি নতুন ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করে। যেহেতু অটোমোবাইলে দক্ষ কর্মীর অভাব সেনেগালে রয়েছে। সেহেতু এই খাতও হতে পারে সম্ভাবনাময় জনশক্তি রপ্তানীর একটি খাত।’ তাছাড়া পাইকারি ও খুচরা বিক্রি, অটোমোবাইল মেরামত, কৃষি, বনায়ন সেক্টরে তো শ্রমিক রপ্তানির সুযোগ রয়েছেই। এ ছাড়াও নার্স, ফিজিওথেরাপিস্ট, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, কাঠমিস্ত্রি, পানির মিস্ত্রির মতো পেশাজীবিদের বিশেষ চাহিদা রয়েছে সেনেগালে।
নুরুজ্জামান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির জন্য বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও। এখানে নেই বাংলাদেশের দূতাবাস বা শ্রম কাউন্সিলর। তবে বাংলাদেশ থেকে যেতে হলে সেনেগালে স্থানীয় কোন স্পন্সর লাগে না। তবে ভিসা নিতে হলে সেনেগালের কোন প্রতিষ্ঠান বা কারো আমন্ত্রণ লাগে। অথবা চাকরীর ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র থাকলে সহজেই ভিসা পাওয়া যায়।
এই সেনেগাল প্রবাসী আরো বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশ ইন্ডিয়াতে সেনেগালের দূতাবাস রয়েছে। এখান থেকে ভিসা নেওয়া যায়। ভিসা পেলে সেনেগালে বসবাস করা যায় ঝামেলামুক্তভাবে। তাছাড়া বিয়ে করলে নাগরিকত্বও পাওয়া যায় । ভিসা শেষ হলে আকামা কিনতে হবে অথবা দেশে ফিরতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই দেশটিতে। এখানে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য দরখাস্ত নিয়ে গেলে তারা বলে- ‘তুমি রেখে যাও পরে এসে নিয়ে যাবে’। সেনেগালে নিশ্চিত মনে কাজ করা যায় কোন সমস্যা ছাড়া । এমন শ্রমবান্ধব পরিবেশ সব সময় থাকে সেখানে।
No comments:
Post a Comment