ইতালি প্রবাসীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে দেশটি থেকে বিনা খরচে প্রবাসীদের লাশ দেশে পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্ত এসেছে। ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদারের উত্থাপিত এ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’।
বৃহস্পতিবার রোমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কার্যালয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের রাষ্ট্রদূত বলেন, গত ৩০ জুলাই বাংলাদেশ সরকারের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ২৬৭তম সভায় এ বিষয়টি উপস্থাপন করলে তা গৃহীত হয়। সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইতালিস্থ মান্যবর রাষ্ট্রদূতের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে ইতালি হতে বাংলাদেশিদের মৃতদেহ দেশে প্রেরণের নিমিত্তে ইতালিস্থ দূতাবাস (রোম ও মিলানো) এর অনুকূলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠানো বাবদ যথাক্রমে ৫০ লাখ এবং ২০ লাখ বরাদ্দ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সব প্রবাসীর জন্য এ সুযোগ থাকবে যদি তারা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ নেন ও এ সংস্থা থেকে সদস্যপদের সার্টিফিক সংগ্রহ করেন। ৪০ ইউরো ফি দিয়ে সংস্থার সদস্য ফরম পাওয়া যাবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বাৎসরিক ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। মৃতদেহ বাংলাদেশে পৌঁছালে বিমানবন্দর থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা ও পরবর্তীতে ৩ লক্ষ টাকা পাবেন মৃতব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা।
ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশি আব্দুর রব জানান, প্রবাসীদের মৃতদেহ দেশে ফেরত আনা নিয়ে প্রচন্ড ভোগান্তি পোহাতে হতো। কখনো কখনো খরচের ভয়ে কেউ পরিচয় দিতে চাইতো না। এমনকি কমিউনিটির লোকদের কাছ থেকে টাকা তুলে তারপর সেই খরচে লাশ ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হতো।
এই প্রবাসী আরো জানান, আগে লাশ পাঠাতে এর ওর কাছে হাত পেতে অনেক সময় নষ্ট হতো। ততোদিনে হয়তো দেশে আত্মীয় স্বজন শোকের কথা ভুলেই যেতো। দূতাবাসে গেলেও এ ব্যাপারে কোন সাহায্য পাওয়া যেত না। ফলে এ ধরনের সিদ্ধান্তে ইতালি প্রবাসীদের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
ইতালি প্রবাসী আরেক বাংলাদেশি বলেন, এখন একটা চিন্তুা মুক্ত হলাম আমরা। অন্তত মরার পর লাশটা আপনজনের কাছে নিরাপদে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা হলো। আরেক কর্মী বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে প্রবাসীদের আর বেওয়ারিশ লাশ হয়ে রাস্তায় পরে থাকতে হবে না। লাশের জন্য ভিক্ষা করতে হবে না। আশা করি সব সৎভাবে বাস্তবায়ন করবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, বিশ্বের মোট ১৬০টি দেশে প্রায় ১ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী জীবিকার প্রয়োজনে কাজ করছেন। তাদের কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার ১৯৯০ সালে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল’ গঠন করে। বর্তমানে তা ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’। বোর্ডের নানা সেবার মধ্যে রয়েছে- প্রবাসী বন্ধু কল সেন্টার, অসুস্থ প্রবাসী কর্মীদের জন্য আর্থিক সহযোগিতা, অ্যাম্বুলেন্স সাহায্য, তাদের হাসপাতালে ভর্তি ও সুস্থতার পর পরিবারের কাছে পাঠানো, মৃত প্রবাসী কর্মী ও তার পরিবারের জন্য আর্থিক সহযোগিতা, মৃতদেহ দেশে আনা, মৃতদেহ পরিবহনের জন্য ও দাফনের খরচের জন্য আর্থিক সহযোগিতা ইতাদি।
No comments:
Post a Comment