ডিভি লটারি চিরতরে বন্ধসহ পারিবারিক কোটায় অবাধে গ্রীণকার্ড নিয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এসে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ বন্ধে একটি বিল উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে। এই বিল মোতাবেক কেবলমাত্র দক্ষতা সম্পন্ন মেধাবী বিদেশিরাই যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ ভিসায় আসার সুযোগ পাবে। আর পারিবারিক কোটায় শুধু তারাই আসবেন যাদের বয়স কম ও সিটিজেন অথবা গ্রীণকার্ডধারীর স্বামী-স্ত্রী এবং ২১ বছরের কম বয়সী সন্তানেরা।
এই বিল পাশ হলে অর্ধ শতাধিক বছরের রীতি পাল্টে অভিবাসী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের হার ৫০ ভাগ কমে যাবে। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৫০ হাজার ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার সুযোগ পেয়ে আসছিল। এই প্রস্তাব পাস হলে তাও বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া গ্রীণকার্ড পাওয়া অভিবাসীরা কেবল তাদের স্বামী-স্ত্রী, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান ও অসুস্থ বাবা-মাকে নাগরিক করার আবেদন করতে পারবেন।
পারিবারিক কোটার সুবিধা নিয়ে এতদিন গ্রীণকার্ডধারীরা তাদের ভাইবোন ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দেরও নাগরিক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে পারতেন। এই বিলকে যুক্তরাষ্ট্রে খেটে খাওয়া মানুষদের স্বার্থে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় এমন একটি বিল উত্থাপনের পর ডেমক্র্যাটিক পার্টি দূরের কথা অনেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান কিংবা সিনেটরও তা আমলে না নেয়ায় গত ২ আগষ্ট কিছুটা পরিবর্তন আকারে তা পুনরায় উত্থাপন করা হয়।
এ বিলকে যুক্তরাষ্ট্রেে খেটে খাওয়া মানুষদের স্বার্থে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউজের নীতি নির্দ্ধারকরা বলেছেন, ‘এই বিল আইনে পরিণত হলে যুক্তরাষ্ট্রের খেটে খাওয়া মানুষদের বেকারত্বের হার কমবে এবং একইসাথে মজুরি বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি মেধাবি ও দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশীরা যুক্তরাষ্ট্রে এসে প্রকারান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নেই অবদান রাখতে সক্ষম হবে।’
বিলের উত্থাপক দুই রিপাবলিকান সিনেটরও একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সকলের আন্তরিক সহায়তা চেয়েছেন। সিনেটর টম কটন বলেছেন, ‘আমেরিকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রশ্নে যে ধরনের অভিবাসন নীতির প্রয়োজন, তা বহু বছর থেকেই অনুপস্থিত। এর ফলে কঠোর পরিশ্রমী আমেরিকানরাও ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন সময় হচ্ছে সবকিছুকে জনগণের কল্যাণে ঢেলে সাজানোর’।
সিনেটর টম কটন বলেন, ‘আমরা একটি অভিবাসন ব্যবস্থা চালু করতে চাই, যেখানে শ্রমিকেরা ন্যায্য পারিশ্রমকি পাবেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, এবং প্রতিটি আমেরিকানই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে। আপনি অথবা আপনার পূর্ব পুরুষেরা ম্যা ফ্লাওয়ার দিয়ে ভেসে আসুক অথবা অন্য যে কোনভাবে এসে সিটিজেনশিপ গ্রহণ করুক না কেন, সকলেই আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হবেন’- বলেন সিনেটার কটন’।
সিনেটর ডেভিপ পারড্যু বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী অঙ্গিকারের অন্যতম হচ্ছে আমেরিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটানো এবং বহু বছরের ভঙ্গুর অভিবাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। বিদ্যমান অভিবাসন ব্যবসা কোনভাবেই সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সহায়ক নয়। যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসে নিজেদের ভাগ্য গড়তে চায়, তার মধ্য থেকে মেধাবি বিদেশিদের আমরা স্বাগত জানানোর মত অভিবাসন ব্যবস্থা চাই। উত্থাপিত এই রেইজ এ্যাক্ট হচ্ছে সে স্বপ্নের পরিপূরক। যা দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশিদের স্বাগত জানাবে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অবদানের জন্যে’।
এই বিল আইনে পরিণত হলে বর্তমানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে দেয়া চাকরি ও ভিসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে। দক্ষতাসম্পন্নরা ভিসা পাবেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বহু বছর যাবত এমন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, ইংরেজিতে কথা বলা, উচ্চ বেতনে চাকরির অভিজ্ঞতা ও তুলনামূলকভাবে কম বয়স এবং পেশাগতভাবে বিশেষ যোগ্যতা সম্পন্নরা অগ্রাধিকার পাবেন স্থায়ীভাবে বসবাসের ভিসা ইস্যুতে।
এই বিলের প্রতি রিপাবলিকানদের নিরঙ্কুশ সমর্থন আদায়ের জন্যে হোয়াইট হাউজের সিনিয়র এডভাইজার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য, লেখক স্টিফের মিলার, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারি জুলিয়া হাহ এবং এন্ড্যু ব্রেমবার্গ কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
এই বিল পাশ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশিরা। কারণ, গত দশ-বারো বছর যাবত পারিবারিক কোটায় গ্রীণকার্ড নিয়ে বছরে কমপক্ষে ২৫ হাজার জন করে বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। এদিকে, এই বিলের সংবাদ প্রকাশের পরই নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলুন্ঠিত হবার মত এই বিল অবিলম্বে প্রত্যাহার দাবি এবং মুসলিম নিষিদ্ধ ও অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের গ্রেফতারেরও নিন্দা জানানো হযেছে।
এছাড়াও এ বিলের তীব্র সমালোচনা করেছেন ইমিগ্রেশন লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের অ্যাটর্নি মার্ক সিলভারম্যান। তিনি বলেন, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে যখন তুমুল বিক্ষোভ চলছে, যখন এ প্রক্রিয়া আদালতেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তখন এ ধরনের বিল পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করবে। এ ধরনের অ-আমেরিকান কর্মকান্ড চলতে থাকলে একদিন হয়তো ওরা স্ট্যাচু অব লিবার্টিও উচ্ছেদ করবে। নাগরিক হওয়া অভিবাসীদের সবকিছু কেড়ে নিতে চাইবে।
No comments:
Post a Comment