মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে আধুনিক দেশ হিসেবে পরিচিত সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদি আরবের পরই বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার । ২০১২’র অগাস্ট থেকে দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়া হয় বাংলাদেশিদের জন্য। তবে, এখনো বাংলাদেশিদের ব্যবসা, কাজ করা ও থাকার সুযোগ রয়েছে সেখানে। শ্রমিক ভিসা বন্ধের পর শ্রমিক যাওয়া বন্ধ হয়েছে ঠিক।কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনও অনেক সুযোগ রয়েছে এই দেশে। তাছাড়া সীমিত পরিসরে হলেও বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে আরব আমিরাতের শ্রমবাজার। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায় বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত। রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রায় ৩৭ বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে একজন সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেছেন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মোঃ আল মামুন সরকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ছিল তার বীরত্বপূর্ণ অবদান।মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার ভয়েস বাংলার সঙ্গে আলোচনায় আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের ব্যবসায়ী হয়ে উঠার বিষয়ে কথা বলেন । তিনি ভয়েস বাংলাকে জানান, ‘আরব আমিরাতে একজন সরকারী চাকরিজীবি হিসেবে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি বাংলাদেশিদের। তারা অনেক কর্মঠ।মেধা দক্ষতা কোন কিছুর অভাব নেই তাদের। দেশের বাইরে কাজের ক্ষেত্রে তাদের যথেষ্ট সুনাম আছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমি প্রথম যখন আরব আমিরাত যাই তখন এক লাখের কিছু বেশি বাংলাদেশি আরব আমিরাতে ছিল। এখন তা দশ লাখের বেশি। আরব আমিরাতে প্রায় ৩০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি ক্ষুদ্রও মাঝারি ব্যবসায়ী রয়েছে। অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন এ ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ থেকে যারা যাচ্ছে তারা বেশিরভাগই চাকরি করার জন্য যায়। কিন্তু তারা এখানেই থেমে থাকেনি। বাংলাদেশিরা ছোট ছোট ব্যবসা শুরু করে। এভাবে একদিন তাদের কেউ কেউ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়। এমনই একজন বাংলাদেশি মাহবুবুর রহমান। যার পারফিউমের ব্যবসা পুরো পৃথিবীব্যাপী চলে। গাড়ীর টেকনিশিয়ান যেমন রয়েছে। তেমনি বোরখাসহ ভেজিটেবল ও ফ্রুটস্ এর ব্যবসা করে একচেটিয়া বাংলাদেশিরা।মূলত এই ধরণের ব্যবসাতে সব সময় বাংলাদেশিদের প্রাধাণ্য যে কারো চোখে পড়বে।’ আল মামুন সরকার জানান, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে বোরকা বা আবেয়া ব্যবসার সিংহভাগ বাংলাদেশি প্রবাসীদের দখলে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছে হাজার হাজার বাংলাদেশি।সমগ্র আমিরাত জুড়ে যতগুলো বোরকা বা আবেয়ার দোকান ও টেইলারিং সপ আছে তার আশি ভাগই বাংলাদেশি মালিকাধীন বা বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত। যেমন আমিরাতের বিভিন্ন প্রদেশে যতগুলো বোরকা বা আবেয়ার দোকান আছে তার অধিকাংশই আজমান, দুবাই ও শারজাহতে।
আমিরাতের আজমান প্রদেশে আছে প্রায় দুই হাজারের মত আবেয়ার দোকান।যার বেশিরভাগই বাংলাদেশি মালিকাধীন বা বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত’ আরব আমিরাত প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা এখন অন্য দেশের শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করে ব্যবসা করছেন৷ নানা প্রতিকূলতার পরও নতুন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করছেন তারা। দেশীয় কর্মী না হলে অন্য দেশের কর্মীদের দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সত্যিই কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। তার পরও প্রবাসী ব্যবসায়ীরা এসব ঝুঁকি নিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করে রেমিট্যান্স-প্রবাহ সচল করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন।
আবুধাবির শিল্পনগর মোচ্ছাফফায় বাংলাদেশি মালিকানাধীন আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন অটো সার্ভিস সেন্টার থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বর্তমানে আরব আমিরাতে বাংলাদেশিরা শুধু শ্রমিক হিসেবে পরিচিত তা নয়। ব্যবসায়ী হিসেবে মূল ধারায় ভূমিকা রাখছে। মোঃ আল মামুন সরকার ভয়েস বাংলাকে আরো জানান, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিরা শুধু যে ব্যবসায় ভাল করছে এমন নয়।ব্যবসার পাশাপাশি দুবাই মিউনিসিপ্ল এর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট পরিচালনার সঙ্গেও জড়িত আছে বাংলাদেশিরা। তারা সুনামের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছে। ব্যবসার বাইরে চাকরিতেও বাংলাদেশিদের সুনাম তাই মধ্যপ্রাচ্য অনেক বেশি। তবে তিনি মনে করেন দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভিসা বন্ধ এর জন্য নিজেরোই অনেকাংশে দায়ি। কেননা বাংলাদেশিদের কেউ কেউ বদনামের কাজ করেছে এটা যেমন সত্য। তেমনি বার্মার রোহিঙ্গারা, তাদের কারণেও বাংলাদেশিদের দূর্ণাম বহন করতে হচ্ছে।
আল মামুন সরকার ভয়েস বাংলাকে জানান, ‘আর একটি সমস্যা এখানে সবচেয়ে বেশি তা হলো আরব আমিরাতে যাদের জন্ম, বেড়ে উঠা, পড়াশুনা করেছে। তারপরেও তারা কোন চাকরি করতে পারে না। তারা যোগ্য হয়েও কোন সুযোগ পায় না। এ ক্ষেত্রে ভিসা ট্রান্সফার সুবিধা থাকলে এই সমস্যা থাকতো না’ তবে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও আরব আমিরাত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ক্ষুদ্র থেকে শুরু করে মাঝারি ব্যবসায়ী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স প্রেরণে বাংলাদেশের উন্নয়ণে তাদের ভূমিকাও অনস্বির্কায।
No comments:
Post a Comment