ইউরোপে ‘অবৈধ’ হয়ে পড়া ৯৩,০০০ বাংলাদেশিকে ফিরতেই হচ্ছে! এরই মধ্যে তাদের ফেরতের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে ঢাকা সফর করে যাওয়া ইইউ প্রতিনিধি দল। গত ২৯ ও ৩০শে আগস্ট রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় ঢাকা ও ব্রাসেলসের মধ্যে দীর্ঘ দেনদরবার (নেগোশিয়েশন) শেষে এ সংক্রান্ত ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস’ (এসওপি)-এর খসড়া চূড়ান্ত হয়।
বিস্তৃত ওই আলোচনার যৌথ সম্মতিপত্র সইয়ের আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এসওপি’র খসড়া চূড়ান্তকরণের মধ্য দিয়ে ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরানো নিয়ে যে টানাপড়েন চলছিল, তার ইতি ঘটতে যাচ্ছে। আগামী দু’মাসের মধ্যে উভয়পক্ষ নিজের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এ বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সমঝোতায় উপনীত হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইইউ জোটভুক্ত দেশগুলোতে ‘অবৈধ’ বিশাল সংখ্যক বাংলাদেশিকে ফেরানোর বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে ‘আমানবিক’ মনে হলেও এটি দীর্ঘ মেয়াদে সুফল দেবে। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে এবং ইউরোপে নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও বৈধ অভিবাসনের পথ প্রশস্ত করবে। দেশগুলোতে বৈধভাবে যাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিক, শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ীদের ভিসা প্রাপ্তি সহজতর হবে।
এছাড়া বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার যে অপরিহার্য শর্ত রয়েছে তা পূরণেও অনিরাপদ বা বিশৃঙ্খল অভিবাসনকে নিরুৎসাহিত করা জরুরি। ঢাকা ও ইইউ সূত্র জানিয়েছে, এসওপি’র আলোচনা চূড়ান্ত করতে ইউরোপীয় এক্সটার্নাল সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (পররাষ্ট্র সচিব পদমর্যাদা) পাওলা পেম্পেলনির নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২৯শে আগস্ট ঢাকায় আসেন। ওই দলে ঢাকাস্থ ইইউ কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও যুক্ত ছিলেন।
ব্রাসেলসের প্রতিনিধি দলটি গতকাল তাদের ঢাকা সফর শেষ করেন। সফরকালে মূলত ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরানো সংক্রান্ত ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস’ (এসওপি) চূড়ান্তকরণের আলোচনা করেন তারা। গত মঙ্গলবার থেকে ওই আলোচনা শুরু হয়ে চলে বুধবার পর্যন্ত। আলোচনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল আহসান বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
ওই দলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের (ভেরিফিকেশন) সঙ্গে যুক্ত সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও ছিলেন। দু’দিনের আলোচনায় এসওপি’র খসড়া চূড়ান্ত হয়। সেই খসড়ায় ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের ফেরাতে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ে যৌক্তিক সময় প্রস্তাব করেছে ঢাকা। যা ইইউ প্রতিনিধি দল মেনে নিয়েছে। উল্লেখ্য, জুলাইয়ের মধ্যে এসওপি’র আলোচনা শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল ব্রাসেলস।
এ নিয়ে ইউরোপের ২৮ রাষ্ট্রের জোট ইইউ এসওপি’র নেগোসিয়েশন চূড়ান্ত করতে ঢাকাকে অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে আসছিল। ইইউ’র তরফে কঠিন শর্ত দেয়া হয়েছিল ইউরোপে অবৈধভাবে যে সব দেশের নাগরিক রয়েছেন তাদের ফিরিয়ে না নিলে দেশগুলোর সাধারণ নাগরিকদের ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করার। বাংলাদেশ অবশ্য সব সময়ই বলেছে তাদের ফিরিয়ে আনবে, তবে সবার আগে নাগরিকত্ব যাছাই করতে হবে। ইউরোপে অনেক রোহিঙ্গা রয়েছে।
তারা যেন বাংলাদেশিদের সঙ্গে ফিরতে না পারে- তা নিয়ে আগাগোড়ায় সতর্ক ছিল ঢাকা। ইইউ প্রতিনিধি দলের সফরে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, কেবল দেশে নয়, বিদেশেও যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বাড়তি ঝামেলা তৈরি করছে বিশেষ শ্রমবাজারে, এটি ইইউ’র কাছেও স্পষ্ট করা হয়েছে। অবৈধদের ফেরানো বিষয়ক দু’দিনের বৈঠকের যৌথ সম্মতিপত্রে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (ইউরোপ) খোরশেদ আলম খাস্তগীর এবং ইইউ’র পক্ষে কো-চেয়ার লরেন্স সই করেন।
No comments:
Post a Comment