ওয়াটার ডেমোক্রেসি বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডেস’র সর্ম্পক উন্নয়নের রয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা। এছাড়াও তৈরি পোশাকের মান এবং কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নেদারল্যান্ডসের গুরুপ্তপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন গবেষনা কর্মে যুক্ত নেদারল্যান্ডস প্রবাসী মহিদুল ইসলাম। সমুদ্র সম্পদসহ সমুদ্র উপকূলকে কাজে লাগিয়ে নেদারল্যান্ডস যেভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশেরও সেই সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ভূ-কেন্দ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি সমুদ্রভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের সামনে খুলে দিতে পারে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত। যথাযথ পরিকল্পনা, উপযুক্ত জ্ঞান ও প্রযুক্তির যে ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডেস হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম সহযোগী বন্ধু। বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জ্বালানি নিরাপত্তায় সমুদ্রের খনিজ সম্পদের ব্যবহার, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরকে উন্নয়নের নিয়ামক হিসেবে ব্যবহার করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে, সমুদ্রসম্পদ ব্যবহারে বাংলাদেশের যথেষ্ট প্রযুক্তির ঘাটতি রয়েছে।
ঘাটতি রয়েছে সমুদ্রসম্পদের প্রাপ্যতা, উত্তোলন ও ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশের পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের। তবে দক্ষ জনবল তৈরিতে এরইমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তবে তা বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি শিল্পোন্নত দেশ নেদারল্যান্ডস সহায়তা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণে সহযোগী হতে পারে। মহিদুল ইসলাস আরো বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলাসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সমুদ্রসম্পদের ভূমিকা অপরিসীম। বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যে দেশ সমুদ্রকে যত বেশি ব্যবহার করতে পেরেছে, সে দেশ তার অর্থনীতিকে তত এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।’ নেদারল্যান্ডস ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসরমান দেশ।
ব-দ্বীপ রাষ্ট্র হিসেবে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় নেদারল্যান্ডেসর কর্মপদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে ব্যবহার উপযোগী হবে। এ ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতা ও উদ্ভাবনী কৌশল বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রয়োগ করে যেতে পারে। যা বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে এ ব-দ্বীপকে নিরাপদ ও উৎপাদনশীল রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখতে সহায়ক হবে। এ বিষয়গুলিকে সামনে রেখে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ডাচ সরকারের শিক্ষা আন্তর্জাতিকীকরণ প্রতিষ্ঠান নাফিকের সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের সমুদ্র প্রযুক্তির নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। মূলত বাংলাদেশ দূতাবাস ও নাফিক গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডসের মধ্যে কি কি ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা যেতে পারে তার উপর কাজ করে আসছে। মহিদুল ইসলাম বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নের বিষয়েও ভয়েস বাংলার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, ‘ডাচ প্রযুক্তি ও কর্মপন্থা প্রয়োগ করতে পারলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প আরো উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারবে তা নিঃসন্ধেহে বলা যায়। কেননা
নেদারল্যান্ডেস তাদের ফ্যাশন ডিজাইন, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, বিপণন, ব্রান্ডিং-এ যে উৎকর্ষ সাধন করেছে তা বাংলাদেশে প্রয়োগের মাধ্যমে তৈরি পোশাক খাতকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।’ পানি কূটনীতি, সমুদ্র অর্থনীতি ও চামড়া শিল্পের আধুনিকায়নে নাফিকের সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। পানি ব্যবস্থাপনায় ডাচদের যে বিশ্বজোড়া খ্যাতি রয়েছে তা প্রয়োগ করতে পারলে বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে। যেহেতু বাংলাদেশের জন্য সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই টেকসই পদ্ধতিতে সমুদ্র সম্পদ আহরণের জন্য সমুদ্র অর্থনীতিতে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস হতে পারে বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম সহযোগী।